মৌসুম এখন আমড়ার। ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়ামে ভরপুর এ ফল নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এর রয়েছে বিশেষ পুষ্টিগুণ। জানাচ্ছেন খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ আলমগীর আলম
আমড়াকে বলা হয় সোনালি আপেল। এটি অ্যানাকারডিয়েসি পরিবারভুক্ত। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও আঁশ রয়েছে, যা শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি। কারণ, এসব আপনার মেরুদণ্ডকে সোজা রাখে; হজমে সহায়তা করে। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি রোগ এড়ানো যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ–জাতীয় পদার্থ ও ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। এ ছাড়া আছে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম। আরও আছে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি, ৪-৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট।
• বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এ কারণে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর। এ ছাড়া বদহজমের কারণে সৃষ্ট সমস্যা যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে এটি। আহারের পর নিয়মিত আমড়া খেলে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে।
• হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে শরীরে অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
• সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিরোধ: আমড়া বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই আমড়ার মৌসুমে প্রতিদিন এ ফল খেলে নানা সংক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
• হাড়কে মজবুত করতে: ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের রোগ, মাংস পেশির খিঁচুনিসহ অনেক রোগ হতে পারে। তাই প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আমড়ার খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত খেলে প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ফলে হাড়ের যেকোনো রোগ দূর করা ছাড়াও হাড়কে শক্তিশালী রাখতেও সাহায্য করে।
• ত্বক ভালো রাখতে: ব্রণ কমিয়ে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে আমড়া দারুণ উপকারী। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
• পেশিশক্তি বৃদ্ধিতে: আমড়ায় থিয়ামিন নামের একটি উপাদান পাওয়া যায়, যেটি মানুষের শরীরে পেশি সংকোচন ও স্নায়ুসংকেত সঞ্চালনে সহায়তা করে। তাই আমড়া মানুষের পেশির দুর্বলতা দূর করে একে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
• রক্তস্বল্পতা রোধ: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকর। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও ঠিক রাখে।
• রুচি বৃদ্ধি: অসুস্থদের মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে আমড়া দারুণ কার্যকর। আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। তাই রুচি বাড়াতে নিয়মিত ফলটি খাওয়া যেতে পারে।
• স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে: আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খেলে স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
• দাঁতের সমস্যায়: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতের গোড়া থেকে পুঁজ ও রক্ত পড়া, প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, খেতে অসুবিধা হওয়া, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধে আমড়ার ভূমিকা অনন্য।
আমড়ায় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। এসব উপাদান স্ট্রেসের প্রভাব কমাতেও সহায়তা করে।
প্রথম আলো থেকে পড়ুন: আমড়া খান, সুস্থ থাকুন
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের ভিটামিন খাওয়া উচিত। ফল ও সবজি থেকে ভিটামিন পেয়ে থাকি। আমাদের মাঝে তাই একধরনের মানসিকতা… Read More
রসুন কেবল মসলা নয়, ঔষধিও। ফলে রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও রসুন নানাভাবে সেবন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরিমাণ জানা না থাকলে… Read More
This website uses cookies.