খাওয়া কমালেও ইউরিক অ্যাসিড কমে না

বর্তমানে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে ভোগান্তি মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম না। আমেরিকান কলেজ অব রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ এই কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। বিশেষ করে গেঁটেবাত হলো আর্থ্রাইটিসের একটি কষ্টকর রূপ। যখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রার কারণে একটি জয়েন্টে এবং তার চারপাশে স্ফটিক তৈরি হয় এবং জমা হয়, তখনই এটি ঘটে। বলা হয়ে থাকে, শরীরে পিউরিন নামক রাসায়নিক ভেঙে গেলে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পিউরিন আপনার শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে, তবে এটি নির্দিষ্ট খাবারেও পাওয়া যায়।

নিজস্ব নিয়মে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু যখন এটির পরিমাণ বেড়ে যায়, সবগুলো বের হতে পারে না, তখনই বিপত্তি ঘটে। শরীরের নানা অঙ্গে ব্যথা করতে থাকে। সবচেয়ে বেশি হয় হাঁটু আর গোড়ালিতে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, সঠিক ডায়েট রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বিভিন্ন খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন। যেমন- টমেটো, ঢেঁড়স, শিম ইত্যাদি।

সত্যিই কি ইউরিক অ্যাসিডে খাবার ছেড়ে দিতে হয়!

খাওয়া কমালেই ইউরিক অ্যাসিড কমে না। খাবার হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটি মূত্রের স্বাভাবিক উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনো কখনো ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালিতে থিতিয়ে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। থিতিয়ে পড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালের আকার নেয়। এটি গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ ডেকে আনে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। খাবার বন্ধ করে দিলেই যে এই সমস্যা মিটে যাবে, তা ঠিক নয়।

বেশ কয়েক বছর আগেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে নানা খাবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সবই খাওয়া যায়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এমন খাবার খাওয়া চলবে না, যাতে ওজন বেড়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

কী কারণে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে

কৃত্রিম রং, চিনি বা কর্ন সিরাপ দেয়া খাবার একেবারে বন্ধ করা উচিত। কোলাজাতীয় পানীয়, রং দেয়া জেলি, জ্যাম, সিরাপ, কৌটাবন্দি ফ্রুট জুস খাওয়া একদমই চলবে না। আচার, চানাচুর, নোনা মাছ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। পুঁইশাক, পালংশাক, বিনস, বরবটি, রাজমা, মুসুর ডাল, বিউলি ডাল খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। তবে রান্না করা শিম, ঢেঁড়স বা টমেটো খেলে কোনো সমস্যা হয় না। মাছ, চিকেন বা ডিম খাওয়া যায়। তবে সব মিলিয়ে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি নয়।

কিসে ইউরিক অ্যাসিড কমে!

প্রথমত কলা, প্রতিদিন কলা খেতে পারেন। আপেল, টক ফল আর গ্রিন টি খেলে ইউরিক অ্যাসিড কমে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন শুধু লেবুর রস ও কুসুম গরম পানি মিশিয়ে দিনে অন্তত আট গ্লাস পান করতে পারলে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এই সময় অন্য কোনো কিছু খাওয়া চলবে না।

লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Share

Recent Posts

মৌসুম পরিবর্তনের সময় ভালো থাকার কৌশল

বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে খাবারে কিছুটা পরিবর্তন আসে।… Read More

February 22, 2023

গোল্ডেন মিল্কশেকের উপকারিতা

গোল্ডেন মিল্ক, হলুদের দুধ নামেও পরিচিত। প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, আজ যা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই উজ্জ্বল… Read More

February 6, 2023

কুসুম গরম পানিতে শরীর-মন তাজা

শীতের সময় আমাদের শরীর রুক্ষ হয়ে ওঠে, যার দরুন পেটে সমস্যা, খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ত্বকের অনেক সমস্যাই… Read More

January 16, 2023

This website uses cookies.