গোল্ডেন মিল্কশেকের উপকারিতা

গোল্ডেন মিল্ক, হলুদের দুধ নামেও পরিচিত। প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, আজ যা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই উজ্জ্বল হলুদ পানীয়টি গতানুগতিকভাবে গরুর দুধ বা উদ্ভিদভিত্তিক দুধগুলোতে হলুদ এবং অন্যান্য মসলা যেমন দারুচিনি ও আদা সহযোগে তৈরি করা হয়। এর স্বাস্থ্য উপকারের সুনাম আছে অনেক। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং অসুস্থতা রোধ করতে বিকল্প প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গোল্ডেন মিল্কের সক্রিয় উপাদান কার্কুমিন। এটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

গোল্ডেন মিল্কের উপকারিতা

শক্তিশালী হাড় তৈরিতে অবদান রাখে: গোল্ডেন মিল্ক নিয়মিত পানে অস্টিওপেনিয়া এবং অস্টিওপোরোসিস রোধ করা সম্ভব। দুধ ও হলুদ একযোগে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য ধরে রাখবে। যার কারণে শরীরের হাড় মজবুত থাকবে।

প্রদাহ এবং জয়েন্টের ব্যথা হ্রাস করতে পারে: গোল্ডেন মিল্কের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, ক্যানসার, বিপাক সিনড্রোম, আলঝেইমার এবং হৃদরোগসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে এটি বড় ভূমিকা পালন করে।

কার্কুমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। বিডিএনএফ এমন একটি যৌগ যা মস্তিষ্ককে নতুন সংযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোর বিকাশে উৎসাহ দেয়। আলঝেইমারসহ মস্তিষ্কের রোগের প্রকোপ কমায়।

গোল্ডেন মিল্কের মূল উপাদানের সবগুলোই হৃদরোগের ঝুঁকি মুক্ত রাখার সঙ্গে যুক্ত। প্রতিদিন ১২০ মিলিগ্রাম গোল্ডেন মিল্ক ভালো কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএলের স্তর কমিয়ে এইচডিএলের স্তর বাড়িয়ে দেয়। হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩-২৫ শতাংশ কমায়। এন্ডোথেলিয়াল সুস্থ হার্টের জন্য যথাযথ কাজ করে।

গোল্ডেন মিল্কের সঙ্গে প্রতিদিন ১ গ্রাম দারুচিনি রক্তে শকর্রার মাত্রা ২৯% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।

কিছু গবেষণা জানাচ্ছে, গোল্ডেন মিল্কের মসলা ক্যানসারের চিকিৎসায় কিছু সুবিধা দিতে পারে। গোল্ডেন মিল্ক ও দারুচিনির যৌগগুলো ক্যানসার কোষগুলোর বৃদ্ধি হ্রাস, ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে পারে এবং টিউমারগুলোতে নতুন রক্তনালিগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।

গোল্ডেন মিল্ক সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সিনসিটিয়াল ভাইরাস (এইচআরএসভি), যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে পারে। সিনামালডিহাইড ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। এটি ছত্রাকজনিত কারণে শ্বাসকষ্টের সংক্রমণের চিকিৎসায় সহায়তা করে।

দীর্ঘস্থায়ী বদহজমেও এই শেক উপকার করে। হলুদ পিত্তের উৎপাদন ৬২% পর্যন্ত বাড়িয়ে ফ্যাট হজমে সাহায্য করতে পারে। পেটের মধ্যে জ্বলন প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

কীভাবে গোল্ডেন মিল্ক তৈরি করবেন

দুধ ১ কাপ (১২০ মিলি), হলুদ ১ চা-চামচ, ১ টুকরো বা ১/২ চামচ দারুচিনি গুঁড়া, এক চা-চামচ আদার গুঁড়া বা রস, এক চিমটি কালো গোলমরিচ গুঁড়া এবং এক চা-চামচ মধু।

একটি পাত্রে দুধ, হলুদ, আদা ও কালো গোলমরিচ দিয়ে জ্বাল দিন। ফুটে উঠলে সেটাকে ছেঁকে একটি গ্লাসে রেখে দিন। যখন দুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসবে, তখন এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় বিকাল।

লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ। প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময়কেন্দ্র

Share

Recent Posts

খাওয়া কমালেও ইউরিক অ্যাসিড কমে না

বর্তমানে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে ভোগান্তি মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম না। আমেরিকান কলেজ অব রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় সাড়ে… Read More

March 4, 2023

মৌসুম পরিবর্তনের সময় ভালো থাকার কৌশল

বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে খাবারে কিছুটা পরিবর্তন আসে।… Read More

February 22, 2023

কুসুম গরম পানিতে শরীর-মন তাজা

শীতের সময় আমাদের শরীর রুক্ষ হয়ে ওঠে, যার দরুন পেটে সমস্যা, খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ত্বকের অনেক সমস্যাই… Read More

January 16, 2023

This website uses cookies.