দেশি ফলে বেশি বল

দেশি ফলের পুষ্টিগুণ বিদেশি ফলে চেয়ে বেশি। এসব ফল দামেও সস্তা এবং তুলনায় সুলভও। সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর এসব ফল আমাদের রক্ষা করতে পারে নানাভাবে। তাই প্রতি মৌসুমেই উচিত এসব ফল খাওয়া এবং বাচ্চাদের খেতে অভ্যস্ত করা। লিখেছেন আলমগীর আলম

আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে বাহারি ফল জন্মে। এসব দেশি ফল বিদেশি ফলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। শুধু স্বাদে, গন্ধেই নয় পুষ্টিমানের বিচারেও উৎকৃষ্ট। আজকাল অনেকে অনেক দেশি ফলের নাম শুনলে নাক সিটকান। আধুনিক হতে গিয়ে বাচ্চাদের নামীদামি বিদেশি ফল—আপেল, আঙুর, মাল্টা খাওয়ান। অথচ দেশি ফলে পুষ্টি উপাদান বেশি। বিদেশি ফল আপেলে ভিটামিন ‘সি’ আছে খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৩.৫ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে বাংলার আপেল হিসেবে খ্যাত পেয়ারায় ভিটামিন ‘সি’ আছে ২১০ মিলিগ্রাম।

অর্থাৎ পেয়ারায় আপেলের চেয়ে ৫০ গুণের বেশি ভিটামিন ‘সি’ আছে। আঙুরে খাদ্যশক্তি আছে ১৭ কিলোক্যালরি আর কুলে খাদ্যশক্তি আছে ১০৪ কিলোক্যালরি, যা ৬ গুণেরও বেশি। আঙুরে ভিটামিন ‘সি’ আছে ২৮.৫ মিলিগ্রাম, কুলে ভিটামিন ‘সি’ আছে ৫১ মিলিগ্রাম অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। পাকা আমে ক্যারোটিন আছে ৮৩০০ মিলিগ্রাম, পেঁপের মধ্যে আছে ৮১০০ মিলিগ্রাম, কাঁঠালে আছে ৪৭০০ মিলিগ্রাম। সে তুলনায় আঙুর, আপেল, নাশপাতি, বেদানায় ক্যারোটিন আদৌ নেই। বিদেশি ফল মাল্টা ক্যারোটিনশূন্য অথচ দেশি কমলায় ক্যারোটিনের পরিমাণ ৩৬২ মিলিগ্রাম।

অপুষ্টিজনিত রোগবালাই প্রতিরোধে দেশি ফল

ভিটামিন ‘এ’র অভাবে শিশুদের রাতকানা, অন্ধত্ব রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্ববরণ করে এবং রাতকানা রোগে ভোগে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু। হলদে বা লালচে রঙিন ফল যেমন পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কাঁঠাল ক্যারোটিনসমৃদ্ধ। এই ক্যারোটিন প্রায় ৬ ভাগের ১ ভাগ ভিটামিন ‘এ’তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। এসব ফল অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। তাই শিশুসহ সব বয়সীদের উচিত প্রতিদিন বেশি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস করা। ভিটামিন ‘সি’ ত্বককে মসৃণ করে, দাঁতের মাড়িকে মজবুত করে ও সর্দি কাশি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

ভিটামিন ‘সি’ রান্নার তাপে প্রায় ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফল তাজা খাওয়া হয় বলে ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয় না। ফল, বিশেষ করে টক জাতীয় ফল ভিটামিন ‘সি’র রাজা। আমলকী ও অরকুল ভিটামিন ‘সি’র গুদামঘর। ভিটামিন ‘সি’ দৈনিক খেতে হয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন ‘সি’ থাকে ৪৬৩ মিলিগ্রাম আর অরকুলে আছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম। লেবুতে ৪৭ মিলিগ্রাম, কমলা লেবুতে ৪০ মিলিগ্রাম, বাতাবি লেবুতে ১০৫ মিলিগ্রাম, আমড়ায় ৯২ মিলিগ্রাম, কামরাঙায় ৬১ মিলিগ্রাম, জামে ৬০ মিলিগ্রাম, জলপাইয়ে ৩৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ বিদ্যমান। অন্যগুলো সামান্য একটু খেলেই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হবে। লৌহ ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতার কারণে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, জ্ঞান বিকাশ কমে যায়।

গর্ভকালীন রক্ত-স্বল্পতার কারণে প্রসব-উত্তর রক্তক্ষরণের সময় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ফলের অবদান যথেষ্ট। বিশেষ করে কালোজাম, খেজুর, কাঁচকলা, পাকা তেঁতুল, তরমুজ লৌহ ঘাটতি পূরণে সহায়ক। ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় ডাবের বিশুদ্ধ পানি খুবই উপকারী। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাসের মতো পুষ্টিকর উপাদান। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমির ফলে দেহে যে পানির অভাব হয় সে ক্ষেত্রে গ্লুকোজ স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি অতুলনীয়। দৈনিক ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও উপকারী।

ভিটামিন বি২-এর অভাবে মুখের কোণে ও ঠোঁটে ঘা হয়, ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এ ছাড়া নাকের দুই পাশে চর্মরোগ হয়। এসবের অভাব পূরণে ফল চমৎকার কাজ করে। কাঁঠাল, লটকন, ডেউয়া, আতা, শরিফা ও অন্যান্য ফল ভিটামিন বি২-এর অভাব পূরণে সহায়ক। এসব ফল বেশি বেশি খাওয়া দরকার।

তাই মৌসুম অনুযায়ী দেশি ফলের স্বাদের সঙ্গে ফলের শক্তি আমাদের দেহে কার্যকরী উপকার করে, যা আমরা খুব সহজেই নিতে পারি।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ।
ছবি: শেখ সাইফুর রহমানের ব্যক্তিগত আর্কাইভ, সেলিনা শিল্পী ও শামীমা মজুমদার

Share

Recent Posts

মৌসুম পরিবর্তনের সময় ভালো থাকার কৌশল

বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে খাবারে কিছুটা পরিবর্তন আসে।… Read More

February 22, 2023

গোল্ডেন মিল্কশেকের উপকারিতা

গোল্ডেন মিল্ক, হলুদের দুধ নামেও পরিচিত। প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, আজ যা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই উজ্জ্বল… Read More

February 6, 2023

This website uses cookies.