নাভির যত্ন নেওয়া জরুরি

প্রাচীন ভারতীয় ও আদি চায়নিজ চিকিৎসাব্যবস্থায় নাভি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নাভিকে বলা হয় শরীরের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের শরীর জৈব বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়। রক্তের চলমান প্রবাহের সঙ্গে জৈব বিদ্যুতের একটি গভীর সম্পর্ক আছে। তাই নাভি কেবল পেটের ওপর একটি ছোট্ট বিন্দু নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে সক্ষম। শরীরের একাধিক শিরা নাভির সঙ্গে যুক্ত। নাভিকে শরীরে সঠিক স্থানে রাখাটা সুস্থতার লক্ষণ। নাভি ওপরে উঠে গেলে পেটে অস্বস্তি আসবে, গ্যাসে পেট ফুলে যাবে। বদহজম হবে, শরীর দুর্বল থাকবে, সেই সঙ্গে কর্মক্ষমতা কমে আসবে।
আমাদের এই দৃশ্যমান শরীরকে পরিচালনা করে একটি অদৃশ্য প্রবহমান শক্তি, স্নায়ুর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে আমাদের সোলার প্লেক্স বা নাভি। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় এর কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা, চায়নিজ চিকিৎসা, লাতিন চিকিৎসাব্যবস্থায় এই সোলার প্লেক্সের গুরুত্ব অনেক। আমাদের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসাব্যবস্থায় নানা উপায়ে সোলার প্লেক্সের কথা শুনি, এই ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসাব্যবস্থায় বলা হয় যে আমাদের শরীরে বিস্তীর্ণ বিদ্যুৎ নেটওর্য়াকের জংশন হচ্ছে নাভিমূল বা সোলার প্লেক্স।

বিজ্ঞাপন

নাভি ঠিক রাখার নিয়ম

প্রথমে নাভিতে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে আমাদের শরীর ঠিক রাখা। দীর্ঘদিন ধরে নাভি পরিষ্কার না করা হলে, ময়লার আস্তরণ জমে এবং শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই নাভিতে তেল মালিশ করলে, জমে থাকা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে নাভি ও পেটের সম্ভাব্য সমস্যা থেকে মুক্ত রাখে।

• নাভি পরিষ্কার থাকলে রক্ত পরিশোধন এবং বর্ণের উন্নতি করে আপনি যদি উজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বক পেতে চান, তবে নিয়মিত নাভিতে তেল দিয়ে মালিশ করুন। নাভিতে তেল দিয়ে মালিশ করা হলে, এটি রক্ত পরিশোধন করতে সহায়তা করে এবং শরীর থেকে অপদ্রব্য ও দাগ-ছোপ দূর করতেও সহায়তা করে। নিম তেল, নারকেল তেল অথবা বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

• নাভি পরিষ্কার থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়, প্রতিদিন ঠিকভাবে নাভি পরিষ্কার না করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। সংক্রমণের চিকিৎসা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে জীবাণুনাশের জন্য, তেল মালিশ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। শর্ষের তেল ব্যবহার, ব্যাকটেরিয়া নাশ করে এবং পুনরায় ফিরে আসতেও বাধা দেয়।

• পেটের সমস্যা দূর করে পেট খারাপ, পেট ফুলে থাকা অথবা বমি বমি ভাবের মতো বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, নিয়মিত নাভিতে তেল মালিশ করুন। এক্ষেত্রে আদা এবং সর্ষের তেলের সংমিশ্রণ নাভিতে প্রয়োগ করুন। এটি পেটের অস্বস্তি এবং বদহজমের মতো বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

• মাসিকের যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি দেয়। মাসিকের অসহ্যকর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো নাভিতে তেল মালিশ করা। নাভিতে তেল মালিশ করলে এটি জরায়ুর চারপাশের শিরাগুলো রিল্যাক্স হয় এবং ব্যথা প্রশমিত করে, শরীর তরতাজা হয়ে ওঠে।

• ফার্টিলিটি উন্নত করে নাভি হলো মা ও শিশুর মধ্যকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগমাধ্যম। নাভিতে তেল মালিশ, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ফার্টিলিটি উন্নত করতে পারে। এটি ঋতুস্রাবের নানান সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

• দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে আপনি যদি চোখের সমস্যায় ভুগছেন বা দেখার সমস্যা হয়, তবে নাভিতে তেল মালিশ করলে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। এটি ফোলা চোখ এবং ডার্ক সার্কেলের সমস্যা কমাতে পারে।

আকুপ্রেশার

ছবিতে দেওয়া রেখা মেলাতে হবে, যদি এমন মিলে যায় তাহলে নাভি ঠিক আছে, আর যদি ওপর–নিচ থাকে, তাহলে মেলাতে হবে আকুপ্রেশার করে

যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের নাভি ঠিক অবস্থানে নেই, এটা নিশ্চিত। এই নাভি ঠিক আছে কি নেই এটা জানার একটি উপায় হচ্ছে দুই হাতের তালু এক করে দেখা, যেমন ছবিতে দেওয়া আছে, যাদের নাভি ঠিক আছে তাদের দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙুল মেলালে আঙুলের রেখা সমান দেখাবে, কিন্তু যাদের নাভি ঠিক নেই, তাদের এই রেখা ওপর–নিচ দেখাবে।
দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের রেখা মেলানোটাই কাজ!

যাদের রেখা ওপর–নিচ আছে তারা এই স্থানে আকুপ্রেশার করলে রেখা মিলে যাবে, পেটে স্বস্তি আসবে

প্রথমে দুহাত ভালো করে ঘষে নিন, তারপর হাতের তালুতে ঠিক মাঝে মধ্যমা আঙুলের নিচে ছবিতে দেওয়া স্থানে দুই মিনিট চেপে ধরে পাম্প করুন। দুই হাতেই দুই মিনিট করে পাম্প করুন। একটু জোর দেবেন, যাতে একটা চাপ অনুভূত হয়। এভাবে প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে আকুপ্রেশার করুন। কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি আপনার নাভির সঠিক স্থানে আনতে পারবেন, তখন দুই হাত মেলালে দেখবেন দুই কনিষ্ঠ আঙুলের রেখা মিলে গেছে। অদ্ভুতভাবে দেখবেন আপনার পেটের সমস্যা কমতে শুরু করেছে, সেই সঙ্গে পেটের অস্বস্তিজনিত সমস্যা দূর হতে থাকবে।

লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপেশার বিশেষজ্ঞ

প্রথম আলো লিঙ্ক:নাভির যত্ন নেওয়া জরুরি

Share

Recent Posts

ঠান্ডার সমস্যায় স্মুদি

অকারণ ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে প্রাকৃতিক সমাধানে ভরসা রাখা যেতে পারে। এই যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা–সর্দি–কাশিতে সহায়ক হতে পারে ভিটামিন… Read More

November 26, 2023

শীত এসেছে, এখন সময় কেভাস প্রোবায়োটিকের

কেভাস একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এটি শীতে খুবই প্রয়োজনীয় প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ একটি পানীয়, যা ঘরেই তৈরি করে নেওয়া যায়। শীত এলেই আমাদের… Read More

November 21, 2023

না খেয়েও ভালো থাকা যায়

উপোস বা না খেয়ে থাকা। এর ফলে হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায়। শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু এই ফাস্টিংয়েরও আছে নিয়ম। তাই ফাস্টিং… Read More

November 7, 2023

This website uses cookies.