পেয়াজের উপকারিতা

পেয়াজ লিলিয়াসি পরিবারের এলিয়াম গণের বর্ষজীবী কন্দমূলের গাছ। এটি বেশ রসালো। সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। এর বোটানিক্যাল নাম Allium cepa Linn. একটি পেঁয়াজে আছে নানা ঔষধি গুণ। পেয়াজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন

পেয়াজ সারা দুনিয়ায় ব্যবহৃত জনপ্রিয় সবজি মসলা

ঔষধি গুণাগুণ:

(১) তরুণ সর্দিত: মনে হয় যেন জ্বর আসছে, সেইরকম সব লক্ষণ দেখা দিলে নাক বন্ধ, কপাল ভার; সেক্ষেত্রে পেয়াজের রস করে নাস নিলে সর্দিও বেরিয়ে যায় এবং জ্বর ভাবও চলে যায়।

(২) প্রসাব কষা হওয়া: যেকোনো কারণে শরীর গরম হয়ে প্রস্রাব কষে গিয়েছে, সেক্ষেত্রে পেয়াজের রস ১ চা-চামচ ঠাণ্ডা জলের সঙ্গে খেলে ঐ অসুবিধেটা চলে যায়। তবে রস বেশি খেলে যেমন বমি হওয়ার ভয় থাকে, আবার অল্প খেলে তেমনি বমি বন্ধও হয়।

(৩) দাস্ত অপরিষ্কার: দাস্ত হয় বটে কিন্তু খোলসা হয় না, সেক্ষেত্রে এক বা দেড় চা-চামচ পেঁয়াজের রস সমপরিমাণ গরম জলে মিশিয়ে খেলে সে অস্বস্তির লাঘব হয়।

(৪) প্রসাব ধারনে অক্ষমতা: প্রস্রাব চাপলে আর দাঁড়াতে পারা যায় না, প্রায় বেসামাল এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস এক চা-চামচ করে কিছুদিন খেয়ে দেখুন; ওটা সামলে দেবে।

(৫) রক্তস্রাব: শরীর গরম হয়ে অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের রসের নস্যি নিলে তা বন্ধ হয়ে যায়।

(৬) অশে: কোনো কারণে যদি রক্তের অতিস্রাব চলতে থাকে, সেক্ষেত্রে রক্ত বন্ধ করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, এমতাবস্থায় পেঁয়াজের রস এক চা-চামচ করে সমপরিমাণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ভাবে খেলে ওটা হঠাৎ বন্ধনা হয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।

(৭) নাক দিয়ে রক্ত পড়া: নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকলে দুই এক ফোঁটা পেঁয়াজের রসের নস্য নিলে বন্ধ হয়ে যায়।

(৮) হিক্কায়: হাতের কাছে কিছু নেই সেক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ ফোঁটা পেঁয়াজের রস একটু, জলে মিশিয়ে ২ থেকে ৩ বারে একটু একটু করে খাওয়ালে ওটা বন্ধ হয়।

(৯) অত্যধিক গরম: উৎকট গরমে পথে পিপাসা পেলে হঠাৎ জল খাওয়া শরীরের জন্য ভালো না, সেইজন্য ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ঐ সময় পেঁয়াজ বেশি করে ব্যবহার করে। এটাতে নাকি লু, (Lo0) লাগে না। সেই সময় প্রত্যহ একটু করে কাঁচা পেয়াজ খেলে পথে-ঘাটে বিপর্যয়ের ভয় থাকে না।

(১০) বেসিক পেয়াজ: তার সব ভালো, মানুষের শরীরে যে ছয়টি রসের (মধুর, অল্প, লবণ, তিক্ত, কুট, কষায়) প্রয়োজন, সব কয়টি দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে; কিন্তু ব্যবহারের অন্তরায় তার গন্ধ। একে উড়িয়ে দেওয়া যায়, যদি রাত্রে তাকে চৌচির করে কেটে টক দই-এ ভিজিয়ে রাখা যায়। তখন সে সমাজে চলে যাবে, অথচ গুণটাও পাওয়া যাবে। এইটাই বৈদ্যকুলের পেঁয়াজ কৌলিন্য সৃষ্টি।

(১১) কানে পুঁজ: এটাতে অনেক সময় কানের বাইরে ঘা হয়, এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস গরম করে ২ থেকে ১ ফোঁটা কানে দিলে ওটা সেরে যায়।

(১২) বমি নিবারণে: পেঁয়াজের রস ৪ থেকে ৫ ফোঁটা অল্প জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়।

(১৩) বিষ ফোঁড়ায়: টনটন করছে (সে যেখানেই হোক না কেন), এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস করে একটু গরম করে লাগিয়ে দিলে ঐ বিষনিটা কেটে যায়।

(১৪) মাথা ব্যথায়: সর্দিজনিত মাথা ধরায় ২ থেকে ৩ ফোঁটা এর নস্যি নিলে তৎক্ষণাৎ কমে যায়।

(১৫) স্তনের ঠুনকো ও ফোঁড়ায়: পেয়াজের রস গরম করে লাগাতে হয়।

(১৬) মুখ রোগে: পেয়াজ কাঁচা খেলে দাঁতের ও মুখের অনেক রোগ থেকে বাঁচা যায়। এর অন্য একটা নাম মখদূষক। আবার অনেকের অভিমত—এটাতে মুখ গন্ধ হয় বলেই এটির নাম মুখদূষক।

(১৭) পচা ঘায়ে: জলে পেয়াজের রস মিশিয়ে সেই জল দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করলে ক্রিমি বা পোকা হয় না।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Organic sulphide viz, alkylsulphides, allyl propyl disulphide.
(b) Phenolic constituents viz., catechol, protocatechuic acid
(c) Amino compounds viz, different amino acids.
(d) Essential oil.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,৪৪-৪৬।

Share

Recent Posts

ঠান্ডার সমস্যায় স্মুদি

অকারণ ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে প্রাকৃতিক সমাধানে ভরসা রাখা যেতে পারে। এই যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা–সর্দি–কাশিতে সহায়ক হতে পারে ভিটামিন… Read More

November 26, 2023

শীত এসেছে, এখন সময় কেভাস প্রোবায়োটিকের

কেভাস একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এটি শীতে খুবই প্রয়োজনীয় প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ একটি পানীয়, যা ঘরেই তৈরি করে নেওয়া যায়। শীত এলেই আমাদের… Read More

November 21, 2023

না খেয়েও ভালো থাকা যায়

উপোস বা না খেয়ে থাকা। এর ফলে হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায়। শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু এই ফাস্টিংয়েরও আছে নিয়ম। তাই ফাস্টিং… Read More

November 7, 2023

This website uses cookies.