শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের ভিটামিন খাওয়া উচিত। ফল ও সবজি থেকে ভিটামিন পেয়ে থাকি। আমাদের মাঝে তাই একধরনের মানসিকতা আছে যে ভিটামিন খেতে হবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই পরিমাণমতো। ভিটামিন বেশি খেলেই যে উপকার পাওয়া যায় বিষয়টি এমন নয়। শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি ভিটামিন খেলে উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, যা প্রতিদিন গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরের ক্ষতি হবে।
ভিটামিন সি সাধারণত শরীরে তিনভাবে কাজ করে—এটি শরীরে কোলাজেন টিস্যু তৈরিতে সহায়তা করে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত, শরীরের সমস্ত টিস্যুর বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মেরামতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া এটি আয়রন শোষণ, ক্ষত নিরাময় ও তরুণাস্থি, হাড় এবং দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। এটি অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মধ্যে একটি, যা ফ্রি র্যাডিকেল নামের ক্ষতিকর অণুগুলোর পাশাপাশি বিষাক্ত রাসায়নিক ও সিগারেটের ধোঁয়ার মতো জিনিসে তৈরি ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি দরকার
আমাদের শরীর ভিটামিন সি সঞ্চয় করে না, উৎপাদনও করে না। তাই প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে এটি গ্রহণ করতে হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দৈনিক ৭৫ ও পুরুষের ৯০ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন সি দরকার। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের জন্য বেশি পরিমাণে এর প্রয়োজন হয়। ভিটামিন সির ঘাটতি হলে স্কার্ভি রোগ হতে পারে। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, ক্ষত এবং রক্তপাতও হতে পারে ভিটামিন সির অভাবে।
উপকারিতা
ভিটামিন সি সেরােটোনিন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরিতে কাজে লাগে। আমাদের আবেগ, মেজাজ ও ব্যথা-বেদনার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সেরােটোনিনের ভূমিকা রয়েছে। অন্ত্রের আয়রন শোষণেও ভিটামিন সি প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, প্রসবপূর্ব স্বাস্থ্য সমস্যা, চোখের রোগ এবং এমনকি ত্বক কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এটি।
ভিটামিন সি কোথায় পাবেন
ভিটামিন সির কোনো প্রাণিজ উৎস নেই। ফল ও সবজিতে এটি পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম, আমলকীতে ৪৬৩ মিলিগ্রাম, জাম্বুরায় ১০৫ মিলিগ্রাম, জামে ৬০ মিলিগ্রাম, মাল্টায় ৮৪ মিলিগ্রাম, লেবুতে ৪৭ মিলিগ্রাম, কমলায় ৪২ মিলিগ্রাম, আমড়ায় ৯২ মিলিগ্রাম, বরইয়ে ৫১ মিলিগ্রাম, পেয়ারায় ২১ মিলিগ্রাম, এ ছাড়া কাঁচা মরিচে প্রায় ১২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
বেশি খেলে কী হয়
ভিটামিন সি অতিরিক্ত শরীরে থাকবে না, তা প্রস্রাব দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু বেশি খেলে পেট ফুলে যাবে ও পেট খারাপ হবে। অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন সি বেশি খেলে কার্যকরভাবে কাজ করে না। কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে।
কোন অবস্থায় ভিটামিন সি নিরাপদ
ভিটামিন সি কোন অবস্থায় খাওয়া হয়েছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবশরীরে এটি দুটি ইলেকট্রন দান করতে পারে। এ সক্ষমতা আছে বলেই এই ভিটামিন দ্রুত কাজ করে এবং অতিরিক্ত এনজাইম প্রতিরোধ করে। মুখে খেলে ভিটামিন সির পূর্ণ কার্যকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা অর্ধেক হয়ে যায়। এ কারণেই অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যথাযথভাবে কাজ করে না। একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় এই ভিটামিন কার্যকর হয় না।
ভিটামিন সি হলো ‘জল-দ্রবণীয়’ ভিটামিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। যেহেতু শরীর একে সঞ্চয় করে না, তাই স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি কাঁচা খেতে হবে। অথবা ন্যূনতম পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। এটি উচ্চ তাপমাত্রায় দ্রুত নষ্ট হয়। অনেক দিন সংরক্ষণ করলেও এর কার্যকারিতা অর্ধেক হয়ে যায়। তাই বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি পেতে তাজা ফলমূল খেতে হবে।
আলমগীর আলম, খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
অকারণ ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে প্রাকৃতিক সমাধানে ভরসা রাখা যেতে পারে। এই যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা–সর্দি–কাশিতে সহায়ক হতে পারে ভিটামিন… Read More
কেভাস একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এটি শীতে খুবই প্রয়োজনীয় প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ একটি পানীয়, যা ঘরেই তৈরি করে নেওয়া যায়। শীত এলেই আমাদের… Read More
উপোস বা না খেয়ে থাকা। এর ফলে হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায়। শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু এই ফাস্টিংয়েরও আছে নিয়ম। তাই ফাস্টিং… Read More
This website uses cookies.