লিচু স্বাদে ও গুণে অনন্য

লিচু আমাদের দেশের জনপ্রিয় ও অতিপরিচিত ফল। সুন্দর এ ফলের রয়েছে রোগ নিরাময়ের প্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যোপাদান। এসব উপাদান আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করে শরীরকে নীরোগ রাখে। লিচুতে খাদ্যশক্তি ও ভিটামিন সি রয়েছে প্রচুর। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে আছে জলীয় অংশ ৮৪.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, মোট খনিজ ০.৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, আঁশ ০.৫ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬১ কিলোক্যালরি, ভিটামিন বি১ ০.০২ মিলিগ্রাম, আমিষ ১.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ০.০৬ মিলিগ্রাম., চর্বি ০.২, ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৩.৬ মিলিগ্রাম।

লিচুর উপকারিতা

হাড় ভালো রাখে: লিচুতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার। এসব উপাদান হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিচু খেলে কমে হাড়ের ভঙ্গুরতা। সেই সঙ্গে হ্রাস পায় অস্টিওপোরোসিস ও ফ্র্যাকচারের আশঙ্কাও। তাই হাড় ভালো রাখতে খেতে পারেন সুমিষ্ট এ ফল।
কিডনির জন্য উপকারী: কিডনি ভালো রাখতে খাবারের দিকে নজর রাখা জরুরি। লিচুতে পর্যাপ্ত পানি ও পটাশিয়াম থাকার কারণে তা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ফল ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কমে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি।

ভিটামিন বি–সমৃদ্ধ: লিচুতে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, কে, ই এবং বি৬। এতে আরও রয়েছে রাইবোফ্লাভিন ও নিয়াসিন। গ্রীষ্মে আপনি নিয়মিত লিচু খেলে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৬-এর ১০ শতাংশ পাওয়া যায়। এই ভিটামিন সাহায্য করে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে। সেই সঙ্গে আপনাকে রক্ষা করে প্রদাহজনিত রোগ থেকে। শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে কাজ করে লিচু। শুনতে অবাক করা হলেও এটি সত্যি। লিচু একটি কার্যকর ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে কমে প্রদাহ। সেই সঙ্গে এটি টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে সুমিষ্ট ফল লিচু। এর অলিগোনল ভাইরাসকে বাড়তে বাধা দেয়। তাই গরমের এ সময়ে নিয়মিত লিচু খেলে বাঁচতে পারবেন সর্দি ও সাধারণ ফ্লু থেকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য কার্যকর একটি খাবার হতে পারে লিচু। এতে ক্যালরি থাকে খুব কম। যে কারণে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। আঁশযুক্ত হওয়ার কারণে লিচু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত লিচু খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়।

হার্ট ভালো রাখে: হার্ট ভালো রাখার পক্ষে সহায়ক একটি ফল হলো লিচু। এতে থাকে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইট্রিক অক্সাইড। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। ফলে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লিচু খেলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে প্রায় ৫০ শতাংশ।

এ ছাড়া কাশি, পেটব্যথা, টিউমার ও গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি দমনে লিচু কার্যকর। লিচু শরীর ঠান্ডা রাখে। তৃষ্ণা মেটায় ও শরীরের বল বাড়ায়। অত্যধিক ক্লান্তিতে বা দীর্ঘ রোগভোগের পর দুর্বলতায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি লিচু খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। মস্তিষ্কের দুর্বলতায় স্মৃতিবিভ্রম ঘটলে ভুলোমনা মানুষজন দিনে ৮-১০টি লিচু খেলে স্মৃতি স্বাভাবিক হয়।

মৌসুমের সময় সকালবেলা চার-পাঁচটি করে লিচু খেলে বয়স বাড়লেও শরীরে লাবণ্য বজায় থাকে। লিভার রোগে ভুগলে ঠিকমতো খিদে হয় না। পেট অপরিষ্কার হয়, খাদ্যে অরুচি ভাব হয়। এ ক্ষেত্রে দিনে দুবার লিচুর জুস খেলে বা দুই বেলা পাঁচ-সাতটি লিচু খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতা

লিচু গরম ফল। এটি বেশি খেলে পেট গরম হয়ে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত।

লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

Share

Recent Posts

ভিটামিন সি বেশি খেলে বিপদ আছে

শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের ভিটামিন খাওয়া উচিত। ফল ও সবজি থেকে ভিটামিন পেয়ে থাকি। আমাদের মাঝে তাই একধরনের মানসিকতা… Read More

September 23, 2023

রসুন পেটের জন্য ভালো আবার ক্ষতিকর হতে পারে?

রসুন কেবল মসলা নয়, ঔষধিও। ফলে রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও রসুন নানাভাবে সেবন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরিমাণ জানা না থাকলে… Read More

September 18, 2023

This website uses cookies.