উচ্চ আয়ের মানুষ বাড়ছে দেশে। পরিবর্তন আসছে খাবার-দাবারে। খাদ্যতালিকার বড় অংশজুড়ে থাকছে তেল-চর্বিযুক্ত ও জাংক ফুড। বদলাচ্ছে কাজের ধরনও। কায়িক শ্রম বাদ দিয়ে টেবিল ওয়ার্কই বেশি হচ্ছে। এতে শরীরে জুড়ে বসছে অসংক্রামক নানা ব্যাধি। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা NAFLD তারই একটি। গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ বা সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ যকৃতের রোগটিতে ভুগছেন। জীবনব্যাপী এ রোগের ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি বাড়ছে উচ্চ আয়ের, উচ্চশিক্ষিত মানুষের মধ্যে।
চিকিৎসকদের ভাষায়, যকৃতের ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ফ্যাট জমা হলে তাকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে। এতে যকৃতের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। এ অবস্থাকে বলে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা ন্যাশ। এ অবস্থা থেকে অনেকেই পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। কারো কারো এ থেকে লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।
বাংলাদেশে রোগটির ব্যাপকতা কেমন, কারা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তা জানতে দুই বছর ধরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), আইসিডিডিআর,বি, বারডেম ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনের আটজন গবেষক। এর অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ চারটি জেলা শহর ও চারটি উপজেলার ২ হাজার ৭৮২ জনের তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।
এ তথ্য সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যগত তথ্যও সংগ্রহ করেন গবেষকরা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়স, লিঙ্গ, পরিবারের সদস্যদের যকৃতের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগের ইতিহাস, দেহের ওজন ও উচ্চতা এবং রোগকে (লিভারের) ত্বরান্বিত করতে পারে, এমন কোনো ওষুধ তারা সেবন করেন কিনা সংগ্রহ করা হয় সে তথ্যও। একই সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতীত অস্ত্রোপচার ও দাঁতের চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ শনাক্ত করা তাদের।
ফলাফলে দেখা যায়, গবেষণার অধীন ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ NAFLDতে আক্রান্ত। আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এর প্রাদুর্ভাব উচ্চ আয়ের লোকজনের মধ্যে তুলনামূলক বেশি। উচ্চ আয়ের ৫০ দশমিক ৩৮ শতাংশই এ রোগে আক্রান্ত। শিক্ষার স্তর বিবেচনায় এর ব্যাপকতা বেশি উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে। উচ্চশিক্ষিতদের ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ NAFLDতে আক্রান্ত।
এর কারণ হিসেবে গবেষক দলের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, উচ্চ আয় ও উচ্চশিক্ষিত মানুষ সাধারণত টেবিলে বসে কাজ করেন বেশি। তাদের মধ্যে কায়িক পরিশ্রম করার প্রবণতা কম। সে কারণে তাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্তের হার বেশি।
NAFLDতে আক্রান্তদের একজন ঢাকার ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন। এমনিতেই ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তার ওপর কায়িক পরিশ্রম সেভাবে হয় না। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকলে শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারেন, লিভারে চর্বি জমেছে।
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় বলে জানান গবেষক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এজন্য তিনি জনসচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আগে বিষয়টি এতটা জটিলভাবে আমাদের সামনে আসেনি। এটি নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। রোগটি প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্রায় সব বয়সীরা রোগটিতে আক্রান্ত হলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যাপকতাও বাড়তে থাকে। গবেষণার ফলাফলও তা-ই বলছে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। দেখা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৫-৫৪ বছর বয়সীদের ৫৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ যকৃতের এ রোগে আক্রান্ত; যেখানে একই জনগোষ্ঠীর ৩৫-৪৪ বছর বয়স শ্রেণীর ৪৮ দশমিক ৪৬ শতাংশের মধ্যে রোগটির প্রাদুর্ভাব রয়েছে। আর ২৫-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে।
অংশগ্রহণকারীদের বয়স, বসবাসের স্থান, লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক উপদলে ভাগ করে রোগটির সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে। গ্রামের ৪৫-৫৪ বছর বয়সী নারীদের ৬৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশই এ রোগে আক্রান্ত। ওজনের সঙ্গে NAFLDর একমুখী সম্পর্কও বেশ ভালোভাবেই উঠে এসেছে গবেষণায়। ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে NAFLD তে আক্রান্তের শঙ্কাও বেড়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার খুবই কম, ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর স্বাভাবিক বিএমআইযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ রোগটিতে ভুগছে। অন্যদিকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের ৪৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ লিভারে চর্বি জমা রোগে আক্রান্ত। তবে স্থূলদের (Obesity) মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি, ৬৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
জীবনব্যাপী এ রোগ থেকে দূরে থাকতে শৈশব থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (DMC) হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ডোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মিয়া মাসুদ আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, মূলত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ রোগ হয়। আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্তের হার বেশি। কারণ তারা কায়িক পরিশ্রম কম করেন। এছাড়া তাদের মধ্যে তেল-চর্বিযুক্ত ও জাংক ফুড খাওয়ার প্রবণতাও বেশি। প্রয়োজনের তুলনায় তারা বেশি ক্যালরি গ্রহণ করায় শরীরে চর্বি জমে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে লিভার সিরোসিসও হতে পারে, যার হার ২০-৩০ শতাংশ বেশি। তাই আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। কেউ একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসকের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
গবেষকদের মতে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ উদ্বেগের কারণ। পশ্চিমা দেশগুলোয় ২০-৩০ শতাংশ মানুষ রোগটিতে ভুগছে। উপমহাদেশের দেশগুলোর শহরাঞ্চলের ১৬-৩২ ও গ্রামাঞ্চলের ৯-১৬ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত। যদিও বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাবমতে, ২ দশমিক ৮২ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে যকৃতের রোগে।
এ থেকে মুক্তির উপায় কি ?
প্রাকৃতিক নিয়মগুলো মেনে চললে এই সমস্যা থেকে কোন ধরণের পাশ্বর্প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শুধু মাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও আকুপ্রেসার দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More
আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More
নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More
This website uses cookies.