নিউমোনিয়া : লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

মানব সভ্যতার যুগের উন্নতি, আদি বন্য শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষে রূপান্তর। জাগতিক নিয়ম মেনে সময় চক্রে বিবর্তন ও পরিবর্তন হলেও মানবজীবনে পিছু ছাড়ছে না মারণ রোগ। কোনও না কোনও ক্ষেত্রেই রোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে মানব জাতিকে। ক্যান্সার যক্ষা থেকে কঠিন ব্যাধি মৃত্যুশয্যায় ঠেলে দিচ্ছে বহু প্রাণকে। তেমনই এক রোগ নিউমোনিয়া।

বর্তমান দিনে এই রোগের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সমস্ত বয়সের মানুষকেই আক্রান্ত হতে হচ্ছে এই রোগে। পৃথিবীতে মৃত্যুর অষ্টম কারণ হিসেবে চিহ্নিত এই রোগ। কি এই নিউমোনিয়া? চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।

নিউমোনিয়া কী?
নিউমোনিয়া হলো মানব শরীরের ফুসফুসের সংক্রমণজনিত বা প্রদাহ জনিত একটি রোগের নাম। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক কিংবা ভাইরাসের সংক্রমণে এই রোগের সৃষ্টি হয়। অ্যাডেনো ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং প্যারেনোফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে দেখা দেয় এই রোগ।

রোগের কারণ
ফুসফুসে স্ট্রেপ্টোকোকাস ব্যাকটেরিয়া ও শ্বাসযন্ত্রের আর এস ভি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এই রোগের উৎপত্তি। এই সংক্রমণের ফলে ফুসফুস ফুলে ওঠে এবং নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে, অক্সিজেন গ্রহণে সমস্যায় পড়তে হয়। এই রোগ মূলত শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। কারণ এই বয়সে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেকটাই কম থাকে। যার ফলে অতি সহজেই এই রোগ আক্রমণ করে। তবে তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই রোগের প্রবণতা দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ
এই রোগের লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণত শীতকালে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শীতকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা কম থাকায় নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তনে সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকেও কেউ কেউ সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

সাধারণ লক্ষণগুলো হল
১) জ্বর
২) ক্লান্তি অনুভব করা
৩) মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়া
৪) কাশি
৫) শ্বাসকষ্ট
৬) শরীরে কাঁপুনি
৭) বুকে ব্যথা
৮) শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট
৯) মাথাব্যথা
১০) শরীরের মাংস পেশী ব্যথা
১১) খাওয়ার প্রতি অনীহা
১২) বমি বমি ভাব
তবে, এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু অন্য ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। তাই রোগীর কাছে যাওয়ার সময় বা কোনও হাসপাতালে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।

রোগের চিকিৎসা
এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করে কী ধরনের নিউমোনিয়া রোগীকে আক্রমণ করেছে তার উপর। জ্বর, সর্দি, কাশি হলে ঘরোয়া বা সামান্য কিছু ঔষধের সাহায্যে তা সারিয়ে তোলা যায় কিন্তু এই রোগের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এই রোগের নির্ণয় সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই চিকিৎসা করা উচিত।
১) জ্বর সর্দি কাশি হলে যদি কমতে না চায় তবে দুই থেকে তিন দিনের মাথায় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
২) ডাক্তারের পরামর্শে সিটিস্ক্যান এবং বুকের এক্সরে করাতে হবে।
৩) সঠিক রক্ত পরীক্ষা এবং কফ বা শ্লেষ্মা পরীক্ষা করতে হবে
৪) ওষুধ চলাকালীন পাঁচ থেকে ছয় দিনের মাথায় চিকিৎসায় সাড়া না পেলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
৫) চিকিৎসা চলাকালীন অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স গ্রহণ করবেন ,তা না করলে ভবিষ্যতে এই রোগের চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
৬) ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ছত্রাক জাতীয় নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করুন। এটি কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারে সংক্রমণটি ধীরে ধীরে নির্মূল হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ
১) ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা নিউমোনিয়া রোগের ক্ষেত্রে খুবই খারাপ। তাই প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে।
২) ঠান্ডা লাগা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
৩) নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকা সময়মতো নিতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪) যারা ফুসফুস ,লিভারে ও হৃদযন্ত্রের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিউমোনিয়ার ‘বুস্টার ডোজ’ টিকা নিতে পারেন।
৫) ধুমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬) নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বজায় রাখতে হবে।
৭) এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে এবং শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে।
৮) অন্যের সামনে হাঁচি বা কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯) ডায়াবেটিস ও এইডস-এ আক্রান্ত রোগীদের নিয়মমাফিক চিকিৎসা করাতে হবে।

এ বিষয়ে পরামশের্র জন্য যোগাযোগ করুন : আলমগীর আলম, 29 বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা, কল – 01611010011

Recent Posts

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান। “আমার নাম মাহবুবুর রহমান, পেশায়… Read More

January 25, 2021

প্রচণ্ড পেটব্যথা বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত জরুরি অবস্থাগুলোর একটি হলো হঠাৎ পেটব্যথা। একসময় আমাদের দেশে প্রচণ্ড পেটব্যথার অন্যতম কারণ ছিল গ্যাস্ট্রিক পারফোরেশন… Read More

January 21, 2021

This website uses cookies.