সজোগ্রেন সিন্ড্রোম : কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

সজোগ্রেন সিনড্রোম একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, যার প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল, শুষ্ক চোখ এবং শুষ্ক মুখ। অন্যান্য যে লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে, শুষ্ক ত্বক, শুষ্ক যোনি, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, হাত ও পায়ে অসাড়তা, ক্লান্ত বোধ, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা এবং থাইরয়েডের সমস্যা। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা লিম্ফোমা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে থাকে। এই রোগটি লুপাস বা রিউম্যাটয়েডের মতো নির্দিষ্ট অটোইমিউন রোগগুলির মধ্যেও বেশি দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে সজোগ্রেন সিন্ড্রোমের প্রকোপ প্রায় ০.১ থেকে ৪ শতাংশ।

সজোগ্রেন সিনড্রোমের কারণ কী সজোগ্রেনের সিনড্রোম একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, যা শরীরের কোষ এবং টিস্যুকে আক্রমণ করে। যদিও এর সঠিক কারণ অজানা, তবে বিশ্বাস করা হয় কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই রোগ হতে পারে এবং এর অন্তর্নিহিত কারণ জেনেটিক ও পরিবেশগত। প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে লালা এবং টিয়ার গ্রন্থিকে আক্রমণ করে। কিডনি, যকৃত, ফুসফুস, ত্বক, স্নায়ু এবং থাইরয়েড গ্রন্থির মতো শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিরও ক্ষতি করতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা সজোগ্রেন সিনড্রোমে বেশি আক্রান্ত হন।
লক্ষণ
১) চোখ জ্বালা, চুলকানি
২) চিবানো এবং গিলতে অসুবিধা
৩) জয়েন্টে ব্যথা
৪) ত্বকে র‌্যাশ
৫) লালা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
৬) দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশি
৭) শুষ্ক যোনি
৮) অবসাদ
৯) কথা বলতে অসুবিধা
১০) ঝাপসা দৃষ্টি
১১) পেশীতে ব্যথা
১২) ফুসফুসের রোগ
১৩) পেরিফেরাল স্নায়ুরোগ
১৪) দাঁতের ক্ষয়

ঝুঁকি

১) মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সাধারণত এই রোগ হয়।
৩) যারা এই রোগে আক্রান্ত তারা বাতের রোগে আক্রান্ত।

রোগ নির্ণয়

এই রোগ নির্ণয় করা কঠিন, তবে রোগ নির্ণয়ের জন্য যা যা করা হয়-
১) রক্ত পরীক্ষা – বিভিন্ন ধরনের ব্লাড সেলের স্তর, অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতি এবং অন্যান্য প্রদাহজনক অবস্থার পরীক্ষা করা হয়।
২) চোখের পরীক্ষা – চোখের নীচের পাতায় ফিল্টার পেপারের একটি ছোট টুকরো রেখে চোখের শুষ্কতা পরীক্ষা করার জন্য টিয়ার টেস্ট করা হয়।
৩) লালা পরীক্ষা – এটি লালা গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে। যদি লালা উৎপাদন অপর্যাপ্ত হয়, তবে এটি সজোগ্রেন সিন্ড্রোমকে নির্দেশ করতে পারে।
৪) বায়োপসি – ঠোঁটে প্রদাহের কোনও চিহ্ন আছে কি না তা সনাক্ত করতে ঠোঁটের বায়োপসি করা হয়।

এটি ঠোঁটের লালা গ্রন্থিগুলি থেকে একটি ছোট টিস্যু সরিয়ে একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসা চোখের প্রদাহ কমাতে, মাঝারি থেকে গুরুতর শুষ্ক চোখের চিকিৎসার জন্য আই ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও, লালার উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও চিকিৎসকরা কিছু ঔষুধ নির্ধারণ করেন। এছাড়াও, অ্যান্টি-হিউমেটিক ড্রাগস এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ঔষধগুলি যথাক্রমে জয়েন্টে ব্যথা এবং ওরাল ইস্ট সংক্রমণের লক্ষণগুলি উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। শল্যচিকিৎসাও করা হয়, যার ফলে টিয়ার নালীগুলি চোখ থেকে অশ্রু নিষ্কাশন হ্রাস করতে ছোট প্লাগগুলি দিয়ে সিল করা হয়। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।

এ বিষয়ে পরামশের্র জন্য যোগাযোগ করুন : আলমগীর আলম, 29 বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা, কল – 01611010011

Recent Posts

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান। “আমার নাম মাহবুবুর রহমান, পেশায়… Read More

January 25, 2021

প্রচণ্ড পেটব্যথা বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত জরুরি অবস্থাগুলোর একটি হলো হঠাৎ পেটব্যথা। একসময় আমাদের দেশে প্রচণ্ড পেটব্যথার অন্যতম কারণ ছিল গ্যাস্ট্রিক পারফোরেশন… Read More

January 21, 2021

This website uses cookies.