সিফিলিস কী? কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

সিফিলিস বা উপদংশ হল যৌনবাহিত রোগ, যা ট্রেপোনেমা পেলিডাম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। ২০১৮ সালে, দ্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান (CDC) জানিয়েছে, ৬৪ শতাংশ সিফিলিস পুরুষদের মধ্যে যৌন মিলনের ফলে ঘটে।

সিফিলিসের কারণ ট্রেপোনেমা পেলিডাম হল ব্যাকটিরিয়া, যা সিফিলিস সৃষ্টি করে। যৌনমিলনের ফলে এই রোগ ছড়ায়৷ যৌন ক্রিয়াকলাপের সময় এই ব্যাকটিরিয়া সংক্রামিত ব্যক্তির ক্ষতর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এক দেহ থেকে আরেক দেহে সঞ্চারিত হয়। ব্যাকটিরিয়াগুলি ত্বকের ক্ষুদ্র কাটা বা যোনি, মলদ্বার, ঠোঁট বা মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল, অ্যানাল বা ওরাল সেক্সের মাধ্যমে হয়৷ সিফিলিসযুক্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের বাচ্চাদের মধ্যেও জন্মগত সিফিলিস হয়। বেশিরভাগ নবজাতকের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, তবে হাতের তালুতে এবং পায়ের ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে। পরবর্তী লক্ষণগুলির মধ্যে দাঁতের বিকৃতি, বধিরতা এবং নাকের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত। সিফিলিসের লক্ষণ ও পর্যায়সমূহ প্রাথমিক সিফিলিস – প্রাথমিক পর্যায়ে, কোনও ব্যক্তির মধ্যে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের প্রায় কয়েকদিন পরে যৌনাঙ্গ বা মুখের আশেপাশে ক্ষত বা কালশিটে দাগ পড়তে দেখা যায়৷ এই দাগগুলি ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মতো থাকে৷

সেকেন্ডারি সিফিলিস
সিফিলিসের দ্বিতীয় পর্যায়ে গলা ব্যথা সহ ত্বক ফাটা ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই সময়ের লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তি, জ্বর, চুল পড়া, ওজন হ্রাস, জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হওয়া, মাথা ব্যথা অন্তর্ভুক্ত। লেটেন্ট সিফিলিস – যদি সিফিলিস চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি সুপ্ত অবস্থায় চলে যায়। লক্ষণগুলি লক্ষণীয় না হলেও, ব্যাকটিরিরা শরীরে থেকেই যায়। টেরটিয়ারি সিফিলিস – এটি একটি জীবনে সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং মারাত্মক পর্যায়। এই পর্যায়ে বধিরতা, অন্ধত্ব, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অসুস্থতা, হৃদরোগ, নরম টিস্যু এবং হাড়ের ক্ষয়ক্ষতি, নিউরোসিফিলিস এবং স্নায়বিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

সিফিলিসের ঝুঁকির কারণ
ক) অরক্ষিত বা অনিরাপদ যৌনতা
খ) বিভিন্ন সঙ্গীর সাথে যৌনমিলন
গ) পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌন মিলন
ঘ) HIV সংক্রমণ হওয়া

সিফিলিসের নির্ণয়

রক্ত পরীক্ষা – সিফিলিসের ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবডিগুলি বছরের পর বছর ধরে শরীরে থাকে, রক্ত ​​পরীক্ষা এর সাম্প্রতিক বা অতীত সংক্রমণ শনাক্ত করতে পারে। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড – সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড মেরুদণ্ডের নলের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং রোগটি স্নায়ুতন্ত্রকে কতটা প্রভাবিত করেছে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। শারীরিক তরল – এই তরলটি প্রাথমিক বা দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষত থেকে নেওয়া হয়। অনিরাপদ যৌন মিলন, নতুন সঙ্গী বা একাধিক সঙ্গীর সাথে সহবাস করা, পুরুষের সাথে সহবাস করা এবং যৌনকর্মী হওয়ার পর একজন ব্যক্তি সিফিলিস পরীক্ষা করায়।

সিফিলিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি সিফিলিসকে সহজেই পেনিসিলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়, পেনিসিলিন সিফিলিস চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক। টেরটিয়ারি সিফিলিস থাকলে সপ্তাহে একাধিক ইনজেকশন লাগে। নিউরোসিফিলিসের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্র থেকে ব্যাকটিরিয়া নির্মূল করতে ইন্ট্রাভেনাস পেনিসিলিন প্রয়োজন হয়। পেনিসিলিনে অ্যালার্জি থাকলে অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা হতে পারে।

সিফিলিস প্রতিরোধ
ক) একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌনতা থেকে বিরত থাকুন
খ) সেক্স টয়েজ ভাগ করা এড়িয়ে চলুন
গ) যৌনতার সময় কন্ডম ব্যবহার করুন

এ বিষয়ে পরামশের্র জন্য যোগাযোগ করুন : আলমগীর আলম, 29 বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা, কল – 01611010011

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.