নাক ডাকার সমস্যা? স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত নন তো?

প্রত্যেক মানুষের কাছেই নাক ডাকার সমস্যা অত্যন্ত বিরক্তিকর। যদিও যিনি নাক ডাকেন তিনি বিশেষ টের পান না। কিন্তু যারা সেই ডাক শোনেন, তাঁরা খুবই বিরক্ত হয়ে ওঠেন। আপনি যদি ভাবেন যে নাক ডাকা অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা, তাহলে ভুল করছেন। কারণ, নাক ডাকা কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে জটিল রোগেরও ইঙ্গিত হতে পারে। ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, বয়স বাড়লে এবং শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে নাক ডাকার সমস্যা মাথায় চড়ে বসে। কিন্তু আর একটি ভয়াবহ রোগের কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার নাম ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এই রোগ অনেকটা নিঃশব্দ ঘাতকের মতো, অর্থাৎ ঘুমের মধ্যেই অকাল মৃত্যু হতে পারে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির।

যদিও, ENT স্পেশালিস্টদের মতে, সব নাক ডাকাই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নয়। কিন্তু ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ রোগ থাকলে নাক ডাকার সমস্যা থাকবেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত উচ্চ রক্তচাপ, টনসিলের সমস্যা, স্থূলতা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো সমস্যার কারণে শরীরে বাসা বাঁধে এই প্রাণঘাতী ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি মানুষ ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ রোগে আক্রান্ত। অন্য একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষে প্রায় ৩৬.৩৪ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। তবে চলুন, জেনে নেওয়া যাক ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ সম্পর্কে বিস্তারিত।

স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?

স্লিপ অ্যাপনিয়া হল একটি ঘুমের অসুখ। ঘুমানোর সময় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, শ্বাস নেওয়া ক্রমাগত বন্ধ হয়ে যায়। অক্সিজেন সাপ্লাই কমে গিয়ে কখনও কখনও মানুষের মৃত্যু পর্যন্তও ঘটে। এই রোগের সাধারণ একটি লক্ষণ হচ্ছে ‘নাক ডাকা’। সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

প্রকারভেদ
এই রোগ সাধারণত দুই প্রকারের হয়।
১) অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া – এটি রোগের সাধারণ অবস্থা। যেখানে নাক থেকে শ্বাসনালীর মধ্যেকার কোনও একটি অংশ অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং নাক ডাকে।
২) সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া – এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী পেশিগুলোকে সঠিক সময়ে সংকেত প্রেরণ করতে পারে না।

রোগের লক্ষণ
১) জোরে জোরে নাক ডাকা।
২) ঘুমানোর সময় হাঁপানো বা শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।
৩) খিটখিটে ও বদমেজাজি হয়ে পড়া।
৪) রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে সারাদিন ধরে ঝিমুনি ভাব।
৫) মাথা যন্ত্রণা
৬) অনিদ্রা
৭) মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া
৮) রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

রোগের কারণ
১) শরীরে অত্যাধিক ফ্যাট জমা হওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ফলে এই রোগ দেখা দেয়। ২) বিশেষত গলা ও বুকের চারপাশের অঞ্চলে স্থূলতা।
৩) বয়সজনিত কারণে দেখা দিতে পারে। মূলত ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে।
৪) মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানের ফলে।
৫) বংশগত কারণে।
৬) টনসিলের বৃদ্ধি পাওয়া।
৭) শিশুদের ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। ৮) কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের বিকলতা।

রোগ নির্ণয়
প্রথম অবস্থায় রোগের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করে থাকেন। লক্ষণ দেখে যদি নির্ণয় সম্ভব না হয় তবে Polysomnography টেস্ট করা হয়। যার সাহায্যে রোগীর নিঃশ্বাসের গতিবিধি, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরিমাপ করা হয়।

চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের চিকিৎসা রোগের মাত্রার উপর নির্ভর করে করা হয়। তবে কিছু ঔষধপত্র সেবন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন – ওজন কমানো এবং ধূমপান ত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়। সিরিয়াস ক্ষেত্রে ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে’ প্রেসার ঠিক রাখার জন্য মাস্ক দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করে থাকেন চিকিৎসকেরা।

প্রতিরোধের উপায়
১) ওজন নিয়ন্ত্রণে এনে শরীরকে স্লিম ও ফিট রাখতে হবে।
২) ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩) খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪) খাবার পরেই না ঘুমিয়ে ১৫-২০ মিনিট হাঁটাচলা করার পর তবে ঘুমোনো উচিত।
৫) নিয়মিত ব্যায়াম ও মর্নিং ওয়াক, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। ৬) ঘুমোনোর ভঙ্গিমা পরিবর্তন করতে হবে, যেমন – চিত হয়ে শোওয়ার পরিবর্তে এক পাশ ফিরে শোওয়ার অভ্যাস করুন।
৭) শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.