ডাইভার্টিকিউলিটিস : এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

পরিপাকতন্ত্রের সাথে যুক্ত এই ডাইভার্টিকিউলিটিস । এটি পরিপাকতন্ত্রের প্রাচীরে হয়। এগুলো সাধারণত কোলন বা বৃহদন্ত্রের নীচের দিকে দেখা যায়। কখনোও কখনোও এক বা একাধিক থলিতে ইনফেকশন, ইনফ্লামেশন বা জ্বালা হয়। এর ফলে তলপেটে খুব ব্যাথা, জ্বর, বমিভাব ও মলত্যাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা দেয়।

বর্তমানে ডাইভার্টিকিউলিটিস একটি খুব সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি হজম সংক্রান্ত একটি সমস্যা যা কোলনকে প্রভাবিত করে (বৃহদন্ত্র)। এই রোগে, বৃহদন্ত্রের প্রাচীরে ছোটো ছোটো পিন্ড তৈরি হয়। এই ডাইভার্টিকুলাগুলিতে প্রদাহের সৃষ্টি হলে তখন তাকে ডাইভার্টিকিউলিটিস বলে।

ডাইভার্টিকিউলিটিস মূলত কোলনের নীচের বাম প্রান্তে হয়। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই হতে পারে। বিশেষত ৪০ বছর বয়সের পরে এই রোগ দেখা দেয়। গবেষকদের মতে, 8সাধারণত ৮০ শতাংশ মানুষ ডাইভার্টিকিউলিটিসের কোনও লক্ষণ অনুভব করেন না। যখন এই ডাইভার্টিকুলাগুলি তৈরি হতে থাকে তখন কোনও উপসর্গ বোঝা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় নিয়মিত সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে ও সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এটি সারানো যায়। তবে এই রোগ মারাত্নক রুপ ধারণ করলে অবশ্যই সার্জারির দিকে এগোতে হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ : ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর হয়। রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে হঠাৎ বা বেশ কয়েকটি দিনে এই রোগের বৃদ্ধি হতে পারে।
১) পেট ব্যাথা, বিশেষ করে পেটের বাম দিকে ব্যাথা
২) বমি বমি ভাব
৩) কোষ্ঠকাঠিন্যতা
৪) মলত্যাগে রক্ত পড়া
৫) জ্বর
৬) ডায়রিয়া
৭) ক্লান্তিবোধ করা

এই রোগের কারণ :
চিকিৎসকদের মতে, কোলনের ভেতরের প্রাচীরের কোনও দুর্বল অংশে চাপ পড়লে সেখানে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়। সাধারণত, ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার মলত্যাগে সহায়তা করে। আর, খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়। মলত্যাগে দীর্ঘসময় লাগে যার ফলে কোলনে চাপ পড়ে। আর কোলনে চাপ পড়া মাত্র কোলনের ভিতরের দেয়ালের দুর্বল অংশে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের মূল কারণ এখনও অজানা,কিন্তু এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে সাহায্য করে। কারণগুলি হল-
১) কম ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে
২) রেড মিট
৩) শরীরচর্চা না করলে
৪) ধূমপান
৫) ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
৬) জীনগত
৭) দীর্ঘদিন ধরে কোনও যণ্ত্রণানাশক ওষুধ খেলে
৮) কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত
৯) ওজন বেশি বা শরীরে মেদ বৃদ্ধির কারণে

রোগনির্ণয় :

ডাইভার্টিকিউলিটিস হলে রোগ শনাক্ত করতে,একজন চিকিত্সক রোগীর কী কী উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করেন এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা নিয়েও রোগীকে প্রশ্ন করেন। রোগ শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসকরা মলদ্বার পরীক্ষার সাথে সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন।
পরীক্ষাগুলি এক বা একাধিক হতে পারে-
১) কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসকরা অন্ত্রের ভেতরের সমস্যাগুলি নির্ধারণ করেন। ২) কতটা সংক্রমণ হয়েছে তা দেখতে মূত্র এবং মল পরীক্ষা করা হয়।
৩) প্রদাহ বা কিডনিজনিত সমস্যার দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
৪) এম আর আই,সিটি স্ক্যান,আল্ট্রাসাউন্ড এবং এক্স-রে করা হয়।
৫) মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি টেস্ট কর হয়।

এই রোগের চিকিৎসা :
রোগ নির্ণয়ের পরে,একজন চিকিত্সক রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিত্সা ব্যবস্থা করেন। কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। যেমন-ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া,প্রয়োজনমতো জল পান করা,নিয়মিত শরীর চর্চা করা। এগুলির ফলে অন্ত্রের ক্রিয়া উন্নত করা যায়। এছাড়া,চিকিত্সার অন্যান্য পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:
১) মেট্রোনিডাজল এবং অ্যামোক্সিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ
২) সংক্রমিত ডাইভার্টিকুলা অপসারণের জন্য সার্জারি

ডাইভার্টিকিউলিটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে যে খাবারগুলি
আগেই আলোচনা করা হয়েছে,খাবারে যদি উচ্চ ফাইবারযুক্ত থাকে তাহলে ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে বাধা দিতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যে খাবারগুলি সবচেয়ে উপযুক্ত তা দেওয়া হল-
১) মটরশুটি,বিনস
২) ব্রাউন রাইস
৩) আপেল এবং নাশপাতির মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল
৪) শাকসবজি
৫) মাছ,ডিম
৬) ওটস

এই রোগে যে খাবারগুলি এড়িয়ে যাবেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে এড়ানো উচিত। এই ধরনের খাবারগুলি হল-
১) রেড মিট
২) পপকর্ন
৩) বাদাম

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.