অন্যান্য ভিটামিনের মতো ভিটামিন কে আমাদের দেহের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে অতিরিক্ত রক্তপাত রোধ করে।

আপনি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন, ক্ষুধা কমে গেছে, পেট ফুলে আছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা মাঝে মাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। এমন সব লক্ষণ দেখা দিলে ধরে নিতে হবে, ভিটামিন কে-র ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। এই ভিটামিন আমাদের দেহের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে অতিরিক্ত রক্তপাত রোধ করে।ভিটামিন কে-র মূল ভূমিকা রক্ত জমাট বাঁধার মাধ্যমে আঘাত নিরাময় ও হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করা। এই ভিটামিনের অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। যেমন গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস কমানো আর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখা। এটি হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতেও সাহায্য করতে পারে। ভিটামিন কে দুই রকম। ভিটামিন কে-১, আর ভিটামিন কে-২।

ভিটামিন কে-র অভাব হলে কি হয়

রক্তক্ষরণ

ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই এই ভিটামিনের অভাব হলে রক্তক্ষরণের সমস্যা হতে পারে। ছোট্ট আঘাতেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।

হাড়ের সমস্যা

ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ হতে পারে।

নবজাতকদের রক্তক্ষরণ

নবজাতকদের মধ্যে ভিটামিন কে এর অভাব হলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ভিটামিন কে-র অভাবের লক্ষণ

সহজে রক্তক্ষরণ

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত না সারা

হাড়ে ব্যথা

দাঁতের সমস্যা

ক্লান্তি

নাক দিয়ে রক্ত পড়া

ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া (জন্ডিস)

ফ্যাকাশে চামড়া

আঠালো মলত্যাগ

 

ভিটামিন কে বেশি খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে

লিভারের সমস্যা

অতিরিক্ত ভিটামিন কে লিভারের উপর চাপ বাড়াতে পারে এবং লিভাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা

বিপরীত শোনালেও, অতিরিক্ত ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি রক্তনালীতে জমাট বাঁধা তৈরি করে এবং রক্ত চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অন্যান্য সমস্যা

কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভিটামিন কে শরীর ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, পেশিতে ব্যথা এবং কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

ভিটামিন কে কোথায় পাওয়া যায়

সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, গাজর, ব্রকলি

মাছ: সামদ্রিক মাছ, স্যামন, ম্যাকেরেল

মাংস: গরুর মাংস, মুরগির মাংস

ডিম: ডিমের কুসুম

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: পনির

যেভাবে খেলে দ্রুত ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন

পালং শাক: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। পালং শাককে তেল দিয়ে ভেজে খেলে ভিটামিন কে শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়।

গাজর: গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। গাজরকে তেল দিয়ে ভেজে খেলে ভিটামিন এ শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়।

সঠিক নিয়মে ভিটামিন কে খেলে যে উপকার পাবেন

হাড় মজবুত করে

প্রোটিন অস্টিওকালসিন তৈরি করে, ভিটামিন কে আপনার হাড়কে মজবুত রাখে এবং কম হাড়ের ঘনত্ব এড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় যে প্রতিদিন বেশি ভিটামিন কে প্রাপ্তি আপনার হাড় ভাঙার এবং হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে অস্টিওপেনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।

হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে

ভিটামিন কে ধমনীকে রক্ষা করে এটি প্রদাহ কমায় এবং ক্যালসিয়াম জমা হওয়া প্রতিরোধ করে। যারা বেশি ভিটামিন কে-১ গ্রহণ করেন তাদের ধমনী আটকে থাকার কারণে হৃদরোগের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভিটামিন কে-২ আপনার হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতেও সাহায্য করে।

অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া

আপনি যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাহলে অতিরিক্ত ভিটামিন কে এই ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ভিটামিন কে-র ডোজ

ভিটামিন কে-র জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক ডোজের মাত্রা বয়স এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ৯০-১২০ মাইক্রোগ্রামের প্রয়োজন হয়।

আপনি শাক আর কিছু সবজিতে ভিটামিন কে-ওয়ান আর মাংস, পনির ও ডিমে ভিটামিন কে-টু পাবেন। প্রাপ্তবয়স্কদের খুব কমই ভিটামিন কে-র অভাব থাকে। প্ল্যাসেন্টা আর বুকের দুধ থেকে কম স্থানান্তরের কারণে নবজাতকদের ভিটামিন কে র অভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ভিটামিন কে হজেই আপনি বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে পেতে পারেন।

লেখক: খাদ্যপথ্য বিশেষজ্ঞপ্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র