Description
স্বাদে ও ভেষজগুণে অনন্য ‘চুকাই’
চুকাই, একটি টক জাতীয় সু-স্বাদু ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে এটিকে ফল বা ফুল বলা হলেও গ্রামবাংলায় সবজি হিসেবে বেশ পরিচিত। ভোজনপ্রেমী বাঙালি এটিকে বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকেন। চুকাই শুধু ফলই নয়, এর পাতার জনপ্রিয়তাও ফলের মতোই সমান। এটি খেতে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি ব্যাপক ভেষজ গুণের অধিকারি। বিভিন্ন রোগ-বালাই নিরাময়সহ সুস্থ্য থাকার জন্য অতুলনীয় এই ফল ও পাতা।
চুকাই মূলত একপ্রকার উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ফল। এর ইংরেজি নাম রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘Hibiscus sabdariffa’। সিলেটে এটিকে চুকাই বা হইলফা বলা হলেও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- অম্ব মধু, অম্বল মধু, চুকুল, মেডশ, মেট্টস, মেষ্টা, চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুকা, চুক্কি, গোডা ইত্যাদি। আবার বিশ্বেও অন্যান্য দেশে ডাকা হয় আরো সুন্দর ও ভিন্ন ভিন্ন নামে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হলেও বাংলাদেশে হয় না। অনেক অঞ্চল থেকে এটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় প্রতিটি গ্রামেই চুকাই ফলের গাছ দেখা গেলেও, এখন পাওয়া যায় না। তবে হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বাহুবলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এই চুকাই গাছ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও পাহাড়ি এলাকার প্রায় বাড়িতেই এই গাছ পাওয়া যায়।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমতল ভূমির চেয়ে পাহাড়ি এলাকায় এই গাছ বেশি জন্মায়। তা ছাড়া এই ফলটি পাহাড়িদের জনপ্রিয় খাবার। যার ফলে পাহাড়ে বসবাস করা বিভিন্ন জাতি এই ফলটি নিজেদের আঙিনা বা বাড়ির আশপাশে রোপণ করে থাকেন। পাট জাতীয় এই ফলটি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সু-স্বাদু খাবার তৈরী করেন পাহাড়ি আধিবাসীরা। আবার সমতল ভূমির লোকদের কাছেও কম জনপ্রিয় নয় এটি।
চুকাই ফল ও পাতা দিয়ে তৈরী করা ভর্তা ও শাক গরম ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ। আবার চিংড়ি মাছ, শোল মাছ, ট্যাংড়া মাছ, পুটি মাছ দিয়ে এর ঝোল যে কোন ভোজনপ্রেমী মানুষ একবার খেলে দীর্ঘদিন মুখে লেগে থাকবে। অনেকে গরু কিংবা খাসির মাংসের সাথেও চুকাই পাতা ও ফল ব্যবহার করে থাকেন। এতে খাবারের স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুকাই পাতা শুধু নিজেদের খাবার জন্যই নয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে সম্ভাবনাময় একটি খাতে পরিণত হতে পারে এই চুকাই। চুকাই দিয়ে উৎপাদিত চা, মেস্তা স্বত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার ইত্যাদি বাজারজাত করা গেলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এই শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে, খাবার ও সম্ভাবনাময় শিল্পের এই চুকাই ভেষজ উদ্ভিদ হওয়ায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে, চুকাই দিয়ে যেকোন খাবার অন্যসব খাবারের তুলনায় অধিক পুষ্টি সম্বলিত। এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজি ওষুধ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হতো। চুকাই ফল ও পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় অপরিসীম এটি। চুকাই পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে।
চুকাই সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক আবু আহমদ আহসান কবির বলেন, এটিকে ফল অথবা ফুল দুইটাই বলা যেতে পারে। এটির আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পাওয়া যায়। খেতে টক জাতীয় হলেও বেশ সু-স্বাদু। এ ছাড়া অনেক ঔষধি গুণের অধিকারী এই ফলটি। এটি পাহাড়ি এলাকায় খুব ভালো জন্মে। তাই এই ফলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল
Reviews
There are no reviews yet.