পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

“আমার নাম মাহবুবুর রহমান, পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমি প্রাকৃতিক নিরাময়ে আলমগীর ভাইয়ের সাথে পরিচিত হই; বেশ কিছু দিন আগে। আমার বিভিন্ন রকম সমস্যা ছিল; শারিরীক সমস্যা। প্রথমত, গ্যাস্টিক ছিল মারত্মক রকমের। বলতে গেলে কিছুই খেতে পারতাম না, যা খেতাম সব কিছুতেই আমার গ্যাস তৈরী হতো। দ্বিতীয়ত সমস্যা ছিল, আমার প্রোস্টেটে সমস্যা ছিল। প্রস্রাব ধরলে আমি প্রস্রাবখানায় যাওয়ার আগেই দু-এক ফোঁটা পরে যেত। আমার শরীরে একটা টিউমার ছিল; ব্লাড প্রেশার ছিল। এই ধরণের সমস্যা নিয়েই মূলত আমি আসি আলমগীর ভাইয়ের এখানে। আলমগীর ভাই আমাকে কতগুলো পয়েন্ট দেখিয়ে দেয়, আকুপ্রেসারের পয়েন্ট দেখিয়ে দেয় এবং ম্যাকানিজম বলে যে, কি কারণে এই সমস্ত পয়েন্টে চাপ দিলে এই রোগগুলো ভালো হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসা বলতে মূলত এই পরামর্শটাই নিয়েছি। এবং আমাকে পয়েন্টগুলো দেখিয়ে দিছে এবং আমি বাসাতে এগুলো নিজে নিজে ………”

মাহ্‌বুবুর রহমান
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী

বিস্তারিত: https://youtu.be/oF2ixLTNOfM

প্রচণ্ড পেটব্যথা বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস

প্রচণ্ড পেটব্যথা বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত জরুরি অবস্থাগুলোর একটি হলো হঠাৎ পেটব্যথা। একসময় আমাদের দেশে প্রচণ্ড পেটব্যথার অন্যতম কারণ ছিল গ্যাস্ট্রিক পারফোরেশন বা টাইফয়েডজনিত পারফোরেশন (অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া)। কিন্তু মানুষের সচেতনতা আর প্রাথমিক চিকিৎসাপদ্ধতির উন্নতির কারণে আজকাল আর এ ধরনের অন্ত্র ছিদ্র হওয়ার মতো রোগী বেশি পাওয়া যায় না। বরং আকস্মিক প্রচণ্ড পেটব্যথার একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস পেটের একটি জটিল ও জরুরি সমস্যা। এতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোগের উপসর্গ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেটব্যথা দিয়ে শুরু হয়ে থাকে বলে অনেকে তথাকথিত গ্যাস্ট্রিক ভেবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করে ফেলেন।

রোগের রহস্য

আমাদের পেটের ওপরে একটু পেছন দিকে ও বাম দিকে আছে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস। বিপাক ক্রিয়ার জন্য নানা ধরনের এনজাইম (উৎসেচক) নিঃসরণ থেকে শুরু করে ইনসুলিন ও নানা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি হয় এই প্যানক্রিয়াস থেকে।

প্যানক্রিয়াসে হঠাৎ প্রদাহ শুরু হলে তাকে বলা হয় অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস। আবার অন্য ধরনের একটি প্রদাহ আছে, ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও ব্যথা থাকে।

কেন হয় প্রদাহ

যাদের পিত্তথলি, পিত্তনালি অথবা প্যানক্রিয়াসের নালিতে পাথর আছে, তাদের প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ হতে পারে। এ ছাড়া যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড অনেক বেশি, আর যারা মদ্যপান করেন, তাদেরও এটা বেশি হতে দেখা যায়। পেটে কোনো অস্ত্রোপচার, প্রসিডিউর, আঘাত বা সংক্রমণ থেকেও হওয়া বিচিত্র নয়। পারিবারিক ইতিহাস ও স্থূলতার সঙ্গেও এর একটা সম্পর্ক আছে।

যেভাবে বুঝবেন

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে আকস্মিকভাবে পেটের ওপরের অংশে এবং মাঝখানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা ক্রমশই বাড়তে থাকে। সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ইনজেকশনে বা ব্যথানাশকেও কমে না। এই ব্যথা পেট থেকে পেছন দিকে পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে, প্রচুর বমি হতে পারে। অনেক সময় রোগী পেটব্যথার কারণে সামনের দিকে কুঁকড়ে বা কুঁজো হয়ে বসে থাকেন। কারণ, এতে একটু আরাম মেলে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে রোগী শকে চলে যেতে পারে। মানে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া, রক্তচাপ নেমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইনজেকশন ও শিরায় স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ব্যথা না কমা পর্যন্ত দু–এক দিন না খাইয়েও রাখার দরকার হতে পারে। কোনো কোনো জটিল রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়।

করণীয়

উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া উচিত। উপসর্গ বিবেচনায় চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের ব্যাপারে সহজেই নিশ্চিত হতে পারেন। সাধারণত রক্তের কিছু পরীক্ষা (অ্যামাইলেজ, লাইপেজ) এবং কিছু ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম অথবা সিটি স্ক্যান করে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগটি সহজেই নির্ণয় করা যায়।

এই রোগের চিকিৎসা ঠিকমতো করা না হলে কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হওয়া (অর্গান ফেইলিউর), পেটে পানি আসা, রক্ত বমি হওয়া, প্যানক্রিয়াসে সিস্ট হওয়া, পুঁজ হওয়া ইত্যাদি। তা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস বা বারবার অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের জটিলতা হিসেবে ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইসিস এবং ডায়াবেটিস হতে পারে।

যেভাবে চিকিৎসা

রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। ব্যথানাশক ইনজেকশন, শিরায় স্যালাইন, দরকার হলে শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নিবিড়ভাবে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, প্রস্রাবের পরিমাণ, রক্তের খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, অ্যালবুমিন, সুগার ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা দরকার হয়।

প্রাথমিক ব্যথা ও ধাক্কা কেটে গেলে সমস্যার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। পিত্তথলিতে সমস্যা, পিত্তনালি বা অগ্ন্যাশয়ের নালিতে পাথর থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ওজন ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে কমানো উচিত।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস পেটের একটি জরুরি সমস্যা। অবহেলা করলে এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই তীব্র ও অস্বাভাবিক পেটব্যথা হলে অযথা এর–ওর পরামর্শে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি সেবন করে কালক্ষেপণ করবেন না। পেটব্যথা কেন হচ্ছে, জানতে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

এ ধরনের জরুরি সমস্যায় দ্রুত কাছের হাসপাতাল, পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা 

এই ধরনের সমস্যার জন্য যে কাজটা প্রথম করতে হয় তা হলো ডিটক্সিফিকেশন অর্থাৎ স্বাভাবিক কোন খাবার না খেয়ে শুধু লেবু ও কুসুম গরমপানি খেয়ে তিনদিন পার করা, এই তিনদিনে লেবু পানি ছাড়া প্রতিদিন ডাবের পানি পান করতে হবে দিনে দুবার। এতে দেহ টক্সিনমূক্ত হয়ে যাবে, পেটের ব্যথাও কমে যাবে। তারপর একটি সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে হবে যা আপনার পেটের সমস্যাগুলো ঔষধ ছাড়াই সঠিক উপায়ে কাজ করতে পারে।

আলমগীর আলম
সঠিক সময়ে ডিনার সারুন, ওজন ছাড়াও কমবে অনেক সমস্যা !!

সঠিক সময়ে ডিনার সারুন, ওজন ছাড়াও কমবে অনেক সমস্যা !!

দিনের প্রথম খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন শেষ খাবারও সময়মতো খাওয়া উচিত। রাতে আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার সুস্থতা, ওজন বাড়া বা কমা। যদি আপনি অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ক্যালোরি খরচ না করেন, তাহলে দিনের শেষে ওজন কিন্তু বেড়েই চলবে।

তাই আপনি কী খাচ্ছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কোন সময়ে খাবারটা গ্রহণ করছেন। আমাদের শরীরের ভিতর কোনও ঘড়ি নেই, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ ছন্দ রয়েছে যেটা অনুযায়ী এটি শরীরের প্রধান কার্যগুলি নির্ধারণ করে। ‘সারকাডিয়ান রিদম’ বলা হয় যাকে। এর ফলে আমাদের শরীরের পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন, হজম, ঘুম এবং অন্যান্য অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

মোট কথা হল, দেহের ওজন, মেটাবলিক রেগুলেশন, হার্টের স্বাস্থ্য এবং ঘুম নির্ভর করে আপনার খাওয়ার সময়ের ওপর। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা সবসময় তাড়াতাড়ি ডিনার এবং তাড়াতাড়ি ঘুমানোর পরামর্শ দেন। তাদের মতে, রাতের খাবার সন্ধে সাতটার মধ্যে খেয়ে নেওয়া উচিত। তাড়াতাড়ি ডিনার করার উপকারিতা রয়েছে আরও। দেখে নিন সেগুলি।

১) ওজন কমাতে

তাড়াতাড়ি ডিনার করলে সবথেকে ভালো যেটা হবে সেটা হল ওজন কমবে। ওজন কমাতে আমরা কী না করি – এক্সারসাইজ, দৌড়ানো, পরিমিত খাওয়া। কিন্তু এসবের থেকে বেশি ভালো কাজ দেবে যদি সময়ে খান। পুষ্টিবিদরা বলেন, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যে ৭টার মধ্যে খাওয়া শেষ করা উচিত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে নিলে আপনার দেহ খাবারগুলির সঠিক ব্যবহার করতে পারবে।

২) সুস্থ্যতা ঝুঁকি হ্রাস করে

দেরি করে রাতের খাবার খেলে, আপনি যে ক্যালোরি গ্রহণ করছেন সেটা আপনার শরীর কোনও কাজে লাগাতে পারবে না। ফলে মোটা হতে থাকবেন আপনি। ক্যালোরি খরচ না হলে সেটা ফ্যাট আকারে জমতে শুরু করবে। যার ফলে ওজন বাড়বে দ্রুত।

৩) তাড়াতাড়ি ডিনার করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে যারা ডিনার করেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে, ২৬ শতাংশ প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় তাড়াতাড়ি ডিনার করলে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

৪) এনার্জি বাড়ে, মুড ভালো থাকে

তাড়াতাড়ি ডিনার সারলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করার জন্য অনেকটা সময় পেয়ে যাবে আপনার শরীর। যার ফলে আপনি কম ক্লান্ত বোধ করবেন এবং বিরক্ত ভাব কম আসবে আপনার মধ্যে। তাড়াতাড়ি ডিনার করলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আপনি এনার্জিতে ভরপুর থাকবেন। স্ন্যাকস খেয়েও কমবে ওজন! জেনে নিন কোন স্ন্যাকসগুলো খাবেন

৫) হজম ক্ষমতা বাড়ায়

ঘুমানোর ঠিক আগে ডিনার করলে খাবার পুরোপুরি হজম হয় না। যার ফলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস, অম্বল, পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। এসবই বদহজমের কারণে হবে। ডিনার আর ঘুমের মাঝে যত বেশি সময় থাকবে তত আপনার পাচনতন্ত্র ভালো কাজ করবে।

৬) ভালো ঘুম

ভালো ঘুমের জন্য তাড়াতাড়ি ডিনার করা দরকার। ডিনারের পরই আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার পাচনতন্ত্র কাজ করতে থাকে, যা আপনার REM বা গভীর ঘুমে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে অস্থিরতা বা নিদ্রাহীনতা দেখা দেবে।

৭) হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে

যত দেরিতে ডিনার করবেন, তত বেশি খাবার খাবেন আপনি। দেরিতে খেলে ক্যালোরি নষ্ট হয় না, এবং সেটা ট্রাইগ্লিসারাইডসে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ট্রাইগ্লিসারাইডস হল এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণ। তাড়াতাড়ি ডিনার করলে এই ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে না!

আলমগীর আলম
আলসারেটিভ কোলাইটিস : উপসর্গ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায়

আলসারেটিভ কোলাইটিস : উপসর্গ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায়

পেটের সমস্যায় বেশিরভাগ মানুষই ভোগেন। পেট ব্যথা থেকে পেট খারাপ তাঁদের সবসময়েই সঙ্গী। আর পেটের সমস্যায় ভোগা মানেই নিজের প্রিয় খাবারগুলি থেকে আলাদা হওয়া।আর সেটা যে কী কষ্টের, যার হয় সে জানে! এই পেটের সমস্যাগুলির মধ্যে একটা হল ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস ‘। এই রোগের সাথে ক্রোনস ডিজিজের অনেকটা মিল আছে। এই দুই অসুখকে একসাথে ” ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ ” বলা হয়। সাধারণত সব বয়সের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা দেয়।

আলসারেটিভ কোলাইটিস কী ?
আমাদের বৃহদত্ন্ত্রকে কোলন বলা হয়। আর এই কোলনের ভিতরে যদি কোনও ক্ষতি হয়, যেমন-জ্বালা, ফুলে যাওয়া, ঘা হওয়া, তখন তাকে বলে কোলাইটিস। মনে করা হয়, কোলনের ভেতরের স্তর অর্থাৎ মিউকোসা দুর্বল হলে এ রোগ হতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে বৃহদান্ত্র ও কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয় যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোটো ছোটো আলসার বা ঘা গুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আলসারগুলো একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। এই রোগ জীনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে।

কী কী উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়?
ক) বারবার পাতলা পটি হওয়া
খ) মলের সঙ্গে রক্ত পড়া
গ) পেটে ব্যাথা, মলদ্বারের ব্যথা
ঘ) ওজন কমে যাওয়া
ঙ) খেতে ইচ্ছে না হওয়া

রোগ নির্ণয় :
যান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আর কোনও বিকল্প নেই। সিগময়েডস্কপি , কোলোনোস্কপি , বেরিয়াম ইনেমা , আলট্রাসোনোগ্রাফি – এই গুলির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, রক্তাল্পতা এবং সংক্রমণের কোনও লক্ষণ জানার করার জন্য রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।

চিকিৎসা :
সাধারণত কোলাইটিস যদি ইনফেকশন থেকে হয় তাহলে কিছুদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ঠিক হয়ে যায়। কেউ যদি সুগারের পেশেন্ট হয় তাহলে এই রোগে তাকে ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিষেধ মেনে চলতে হয়। তবে, আলসারেটিভ কোলাইটিস যদি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে এর চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত স্টেরয়েড ও সালফাস্যালাজিন দেওয়া হয়। কম মাত্রায় এই স্টেরয়েড দেওয়া হয়। তবে কারোর ক্ষেত্রে যদি এগুলোও না কাজ করে তখন এই রোগ সারানোর শেষ অস্ত্র হিসেবে অপারেশনকে বেছে নিতে হয়। এক্ষেত্রে কোলন বা পুরো বৃহদন্ত্রই কেটে বাদ দেওয়া হয়।

সময়মতো চিকিৎসা না করালে এক্ষেত্রে আরও খারাপ কিছু হতে পারে, যেমন-
ক) কোলনে ক্যান্সার হতে পারে,
খ) চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল দাগ হতে পারে,
গ) জণ্ডিস হতে পারে,
ঘ) লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে,
ঙ) শরীরে কোমর, মেরুদণ্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় :
পুরোটা ঠিক করা না গেলেও কিছু কিছু জিনিস মেনে চললে এই রোগ অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। সেগুলি হল-
ক) আলসারেটিভ কোলাইটিসের রোগীদের জন্য হলুদ অনেক কার্যকরী। বিশেষ করে হলুদের কারকিউমিন থেরাপির মতো কাজ করে।
খ) বেশিরভাগ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে আলসারেটিভ কোলাইটিসের রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এর ফলে নিয়মিত শরীর থেকে বর্জ্যের সাথে বিষাক্ত ও রাসায়নিক উপাদানও বেরিয়ে যায়।
গ) গবেষণায় দেখা যায় যে, বেশিরভাগ মানুষের আলসারেটিভ কোলাইটিসের সমস্যাকে বৃদ্ধি করে স্ট্রেস। তাই স্ট্রেস কমানো উচিত।
ঘ) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া উচিত। ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
ঙ) রোজকার ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।

ডাইভার্টিকিউলিটিস : এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ডাইভার্টিকিউলিটিস : এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

পরিপাকতন্ত্রের সাথে যুক্ত এই ডাইভার্টিকিউলিটিস । এটি পরিপাকতন্ত্রের প্রাচীরে হয়। এগুলো সাধারণত কোলন বা বৃহদন্ত্রের নীচের দিকে দেখা যায়। কখনোও কখনোও এক বা একাধিক থলিতে ইনফেকশন, ইনফ্লামেশন বা জ্বালা হয়। এর ফলে তলপেটে খুব ব্যাথা, জ্বর, বমিভাব ও মলত্যাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা দেয়।

বর্তমানে ডাইভার্টিকিউলিটিস একটি খুব সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি হজম সংক্রান্ত একটি সমস্যা যা কোলনকে প্রভাবিত করে (বৃহদন্ত্র)। এই রোগে, বৃহদন্ত্রের প্রাচীরে ছোটো ছোটো পিন্ড তৈরি হয়। এই ডাইভার্টিকুলাগুলিতে প্রদাহের সৃষ্টি হলে তখন তাকে ডাইভার্টিকিউলিটিস বলে।

ডাইভার্টিকিউলিটিস মূলত কোলনের নীচের বাম প্রান্তে হয়। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই হতে পারে। বিশেষত ৪০ বছর বয়সের পরে এই রোগ দেখা দেয়। গবেষকদের মতে, 8সাধারণত ৮০ শতাংশ মানুষ ডাইভার্টিকিউলিটিসের কোনও লক্ষণ অনুভব করেন না। যখন এই ডাইভার্টিকুলাগুলি তৈরি হতে থাকে তখন কোনও উপসর্গ বোঝা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় নিয়মিত সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে ও সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এটি সারানো যায়। তবে এই রোগ মারাত্নক রুপ ধারণ করলে অবশ্যই সার্জারির দিকে এগোতে হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ : ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর হয়। রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে হঠাৎ বা বেশ কয়েকটি দিনে এই রোগের বৃদ্ধি হতে পারে।
১) পেট ব্যাথা, বিশেষ করে পেটের বাম দিকে ব্যাথা
২) বমি বমি ভাব
৩) কোষ্ঠকাঠিন্যতা
৪) মলত্যাগে রক্ত পড়া
৫) জ্বর
৬) ডায়রিয়া
৭) ক্লান্তিবোধ করা

এই রোগের কারণ :
চিকিৎসকদের মতে, কোলনের ভেতরের প্রাচীরের কোনও দুর্বল অংশে চাপ পড়লে সেখানে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়। সাধারণত, ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার মলত্যাগে সহায়তা করে। আর, খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়। মলত্যাগে দীর্ঘসময় লাগে যার ফলে কোলনে চাপ পড়ে। আর কোলনে চাপ পড়া মাত্র কোলনের ভিতরের দেয়ালের দুর্বল অংশে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের মূল কারণ এখনও অজানা,কিন্তু এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে সাহায্য করে। কারণগুলি হল-
১) কম ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে
২) রেড মিট
৩) শরীরচর্চা না করলে
৪) ধূমপান
৫) ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
৬) জীনগত
৭) দীর্ঘদিন ধরে কোনও যণ্ত্রণানাশক ওষুধ খেলে
৮) কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত
৯) ওজন বেশি বা শরীরে মেদ বৃদ্ধির কারণে

রোগনির্ণয় :

ডাইভার্টিকিউলিটিস হলে রোগ শনাক্ত করতে,একজন চিকিত্সক রোগীর কী কী উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করেন এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা নিয়েও রোগীকে প্রশ্ন করেন। রোগ শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসকরা মলদ্বার পরীক্ষার সাথে সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন।
পরীক্ষাগুলি এক বা একাধিক হতে পারে-
১) কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসকরা অন্ত্রের ভেতরের সমস্যাগুলি নির্ধারণ করেন। ২) কতটা সংক্রমণ হয়েছে তা দেখতে মূত্র এবং মল পরীক্ষা করা হয়।
৩) প্রদাহ বা কিডনিজনিত সমস্যার দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
৪) এম আর আই,সিটি স্ক্যান,আল্ট্রাসাউন্ড এবং এক্স-রে করা হয়।
৫) মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি টেস্ট কর হয়।

এই রোগের চিকিৎসা :
রোগ নির্ণয়ের পরে,একজন চিকিত্সক রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিত্সা ব্যবস্থা করেন। কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। যেমন-ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া,প্রয়োজনমতো জল পান করা,নিয়মিত শরীর চর্চা করা। এগুলির ফলে অন্ত্রের ক্রিয়া উন্নত করা যায়। এছাড়া,চিকিত্সার অন্যান্য পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:
১) মেট্রোনিডাজল এবং অ্যামোক্সিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ
২) সংক্রমিত ডাইভার্টিকুলা অপসারণের জন্য সার্জারি

ডাইভার্টিকিউলিটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে যে খাবারগুলি
আগেই আলোচনা করা হয়েছে,খাবারে যদি উচ্চ ফাইবারযুক্ত থাকে তাহলে ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে বাধা দিতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যে খাবারগুলি সবচেয়ে উপযুক্ত তা দেওয়া হল-
১) মটরশুটি,বিনস
২) ব্রাউন রাইস
৩) আপেল এবং নাশপাতির মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল
৪) শাকসবজি
৫) মাছ,ডিম
৬) ওটস

এই রোগে যে খাবারগুলি এড়িয়ে যাবেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে এড়ানো উচিত। এই ধরনের খাবারগুলি হল-
১) রেড মিট
২) পপকর্ন
৩) বাদাম