পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

পেটে গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার ও প্রোস্টেটজনিত সমস্যা থেকে যেভাবে মুক্ত হলেন মি. মাহ্‌বুবুর রহমান।

“আমার নাম মাহবুবুর রহমান, পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমি প্রাকৃতিক নিরাময়ে আলমগীর ভাইয়ের সাথে পরিচিত হই; বেশ কিছু দিন আগে। আমার বিভিন্ন রকম সমস্যা ছিল; শারিরীক সমস্যা। প্রথমত, গ্যাস্টিক ছিল মারত্মক রকমের। বলতে গেলে কিছুই খেতে পারতাম না, যা খেতাম সব কিছুতেই আমার গ্যাস তৈরী হতো। দ্বিতীয়ত সমস্যা ছিল, আমার প্রোস্টেটে সমস্যা ছিল। প্রস্রাব ধরলে আমি প্রস্রাবখানায় যাওয়ার আগেই দু-এক ফোঁটা পরে যেত। আমার শরীরে একটা টিউমার ছিল; ব্লাড প্রেশার ছিল। এই ধরণের সমস্যা নিয়েই মূলত আমি আসি আলমগীর ভাইয়ের এখানে। আলমগীর ভাই আমাকে কতগুলো পয়েন্ট দেখিয়ে দেয়, আকুপ্রেসারের পয়েন্ট দেখিয়ে দেয় এবং ম্যাকানিজম বলে যে, কি কারণে এই সমস্ত পয়েন্টে চাপ দিলে এই রোগগুলো ভালো হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসা বলতে মূলত এই পরামর্শটাই নিয়েছি। এবং আমাকে পয়েন্টগুলো দেখিয়ে দিছে এবং আমি বাসাতে এগুলো নিজে নিজে ………”

মাহ্‌বুবুর রহমান
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী

বিস্তারিত: https://youtu.be/oF2ixLTNOfM

আলসারেটিভ কোলাইটিস : উপসর্গ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায়

আলসারেটিভ কোলাইটিস : উপসর্গ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায়

পেটের সমস্যায় বেশিরভাগ মানুষই ভোগেন। পেট ব্যথা থেকে পেট খারাপ তাঁদের সবসময়েই সঙ্গী। আর পেটের সমস্যায় ভোগা মানেই নিজের প্রিয় খাবারগুলি থেকে আলাদা হওয়া।আর সেটা যে কী কষ্টের, যার হয় সে জানে! এই পেটের সমস্যাগুলির মধ্যে একটা হল ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস ‘। এই রোগের সাথে ক্রোনস ডিজিজের অনেকটা মিল আছে। এই দুই অসুখকে একসাথে ” ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ ” বলা হয়। সাধারণত সব বয়সের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা দেয়।

আলসারেটিভ কোলাইটিস কী ?
আমাদের বৃহদত্ন্ত্রকে কোলন বলা হয়। আর এই কোলনের ভিতরে যদি কোনও ক্ষতি হয়, যেমন-জ্বালা, ফুলে যাওয়া, ঘা হওয়া, তখন তাকে বলে কোলাইটিস। মনে করা হয়, কোলনের ভেতরের স্তর অর্থাৎ মিউকোসা দুর্বল হলে এ রোগ হতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে বৃহদান্ত্র ও কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয় যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোটো ছোটো আলসার বা ঘা গুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আলসারগুলো একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। এই রোগ জীনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে।

কী কী উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়?
ক) বারবার পাতলা পটি হওয়া
খ) মলের সঙ্গে রক্ত পড়া
গ) পেটে ব্যাথা, মলদ্বারের ব্যথা
ঘ) ওজন কমে যাওয়া
ঙ) খেতে ইচ্ছে না হওয়া

রোগ নির্ণয় :
যান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আর কোনও বিকল্প নেই। সিগময়েডস্কপি , কোলোনোস্কপি , বেরিয়াম ইনেমা , আলট্রাসোনোগ্রাফি – এই গুলির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, রক্তাল্পতা এবং সংক্রমণের কোনও লক্ষণ জানার করার জন্য রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।

চিকিৎসা :
সাধারণত কোলাইটিস যদি ইনফেকশন থেকে হয় তাহলে কিছুদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ঠিক হয়ে যায়। কেউ যদি সুগারের পেশেন্ট হয় তাহলে এই রোগে তাকে ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিষেধ মেনে চলতে হয়। তবে, আলসারেটিভ কোলাইটিস যদি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে এর চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত স্টেরয়েড ও সালফাস্যালাজিন দেওয়া হয়। কম মাত্রায় এই স্টেরয়েড দেওয়া হয়। তবে কারোর ক্ষেত্রে যদি এগুলোও না কাজ করে তখন এই রোগ সারানোর শেষ অস্ত্র হিসেবে অপারেশনকে বেছে নিতে হয়। এক্ষেত্রে কোলন বা পুরো বৃহদন্ত্রই কেটে বাদ দেওয়া হয়।

সময়মতো চিকিৎসা না করালে এক্ষেত্রে আরও খারাপ কিছু হতে পারে, যেমন-
ক) কোলনে ক্যান্সার হতে পারে,
খ) চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল দাগ হতে পারে,
গ) জণ্ডিস হতে পারে,
ঘ) লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে,
ঙ) শরীরে কোমর, মেরুদণ্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় :
পুরোটা ঠিক করা না গেলেও কিছু কিছু জিনিস মেনে চললে এই রোগ অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। সেগুলি হল-
ক) আলসারেটিভ কোলাইটিসের রোগীদের জন্য হলুদ অনেক কার্যকরী। বিশেষ করে হলুদের কারকিউমিন থেরাপির মতো কাজ করে।
খ) বেশিরভাগ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে আলসারেটিভ কোলাইটিসের রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এর ফলে নিয়মিত শরীর থেকে বর্জ্যের সাথে বিষাক্ত ও রাসায়নিক উপাদানও বেরিয়ে যায়।
গ) গবেষণায় দেখা যায় যে, বেশিরভাগ মানুষের আলসারেটিভ কোলাইটিসের সমস্যাকে বৃদ্ধি করে স্ট্রেস। তাই স্ট্রেস কমানো উচিত।
ঘ) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া উচিত। ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
ঙ) রোজকার ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।

ডাইভার্টিকিউলিটিস : এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ডাইভার্টিকিউলিটিস : এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

পরিপাকতন্ত্রের সাথে যুক্ত এই ডাইভার্টিকিউলিটিস । এটি পরিপাকতন্ত্রের প্রাচীরে হয়। এগুলো সাধারণত কোলন বা বৃহদন্ত্রের নীচের দিকে দেখা যায়। কখনোও কখনোও এক বা একাধিক থলিতে ইনফেকশন, ইনফ্লামেশন বা জ্বালা হয়। এর ফলে তলপেটে খুব ব্যাথা, জ্বর, বমিভাব ও মলত্যাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা দেয়।

বর্তমানে ডাইভার্টিকিউলিটিস একটি খুব সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি হজম সংক্রান্ত একটি সমস্যা যা কোলনকে প্রভাবিত করে (বৃহদন্ত্র)। এই রোগে, বৃহদন্ত্রের প্রাচীরে ছোটো ছোটো পিন্ড তৈরি হয়। এই ডাইভার্টিকুলাগুলিতে প্রদাহের সৃষ্টি হলে তখন তাকে ডাইভার্টিকিউলিটিস বলে।

ডাইভার্টিকিউলিটিস মূলত কোলনের নীচের বাম প্রান্তে হয়। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই হতে পারে। বিশেষত ৪০ বছর বয়সের পরে এই রোগ দেখা দেয়। গবেষকদের মতে, 8সাধারণত ৮০ শতাংশ মানুষ ডাইভার্টিকিউলিটিসের কোনও লক্ষণ অনুভব করেন না। যখন এই ডাইভার্টিকুলাগুলি তৈরি হতে থাকে তখন কোনও উপসর্গ বোঝা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় নিয়মিত সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে ও সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এটি সারানো যায়। তবে এই রোগ মারাত্নক রুপ ধারণ করলে অবশ্যই সার্জারির দিকে এগোতে হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ : ডাইভার্টিকিউলিটিসের লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর হয়। রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে হঠাৎ বা বেশ কয়েকটি দিনে এই রোগের বৃদ্ধি হতে পারে।
১) পেট ব্যাথা, বিশেষ করে পেটের বাম দিকে ব্যাথা
২) বমি বমি ভাব
৩) কোষ্ঠকাঠিন্যতা
৪) মলত্যাগে রক্ত পড়া
৫) জ্বর
৬) ডায়রিয়া
৭) ক্লান্তিবোধ করা

এই রোগের কারণ :
চিকিৎসকদের মতে, কোলনের ভেতরের প্রাচীরের কোনও দুর্বল অংশে চাপ পড়লে সেখানে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়। সাধারণত, ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার মলত্যাগে সহায়তা করে। আর, খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়। মলত্যাগে দীর্ঘসময় লাগে যার ফলে কোলনে চাপ পড়ে। আর কোলনে চাপ পড়া মাত্র কোলনের ভিতরের দেয়ালের দুর্বল অংশে ডাইভার্টিকিউলিটিসের সৃষ্টি হয়।

ডাইভার্টিকিউলিটিসের মূল কারণ এখনও অজানা,কিন্তু এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে সাহায্য করে। কারণগুলি হল-
১) কম ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে
২) রেড মিট
৩) শরীরচর্চা না করলে
৪) ধূমপান
৫) ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
৬) জীনগত
৭) দীর্ঘদিন ধরে কোনও যণ্ত্রণানাশক ওষুধ খেলে
৮) কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত
৯) ওজন বেশি বা শরীরে মেদ বৃদ্ধির কারণে

রোগনির্ণয় :

ডাইভার্টিকিউলিটিস হলে রোগ শনাক্ত করতে,একজন চিকিত্সক রোগীর কী কী উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করেন এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা নিয়েও রোগীকে প্রশ্ন করেন। রোগ শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসকরা মলদ্বার পরীক্ষার সাথে সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন।
পরীক্ষাগুলি এক বা একাধিক হতে পারে-
১) কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসকরা অন্ত্রের ভেতরের সমস্যাগুলি নির্ধারণ করেন। ২) কতটা সংক্রমণ হয়েছে তা দেখতে মূত্র এবং মল পরীক্ষা করা হয়।
৩) প্রদাহ বা কিডনিজনিত সমস্যার দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
৪) এম আর আই,সিটি স্ক্যান,আল্ট্রাসাউন্ড এবং এক্স-রে করা হয়।
৫) মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি টেস্ট কর হয়।

এই রোগের চিকিৎসা :
রোগ নির্ণয়ের পরে,একজন চিকিত্সক রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিত্সা ব্যবস্থা করেন। কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। যেমন-ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া,প্রয়োজনমতো জল পান করা,নিয়মিত শরীর চর্চা করা। এগুলির ফলে অন্ত্রের ক্রিয়া উন্নত করা যায়। এছাড়া,চিকিত্সার অন্যান্য পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:
১) মেট্রোনিডাজল এবং অ্যামোক্সিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ
২) সংক্রমিত ডাইভার্টিকুলা অপসারণের জন্য সার্জারি

ডাইভার্টিকিউলিটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে যে খাবারগুলি
আগেই আলোচনা করা হয়েছে,খাবারে যদি উচ্চ ফাইবারযুক্ত থাকে তাহলে ডাইভার্টিকিউলিটিস হতে বাধা দিতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য যে খাবারগুলি সবচেয়ে উপযুক্ত তা দেওয়া হল-
১) মটরশুটি,বিনস
২) ব্রাউন রাইস
৩) আপেল এবং নাশপাতির মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল
৪) শাকসবজি
৫) মাছ,ডিম
৬) ওটস

এই রোগে যে খাবারগুলি এড়িয়ে যাবেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা ডাইভার্টিকিউলিটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে এড়ানো উচিত। এই ধরনের খাবারগুলি হল-
১) রেড মিট
২) পপকর্ন
৩) বাদাম

মেনিনজাইটিস : রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

মেনিনজাইটিস : রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ মেনিনজাইটিস। ২০১২ সালে, ভারত সরকার সারাদেশে ইউনিভার্সাল টিকাদান কর্মসূচিতে (UIP) পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন প্রবর্তন করে। যদিও বর্তমানে মেনিনজাইটিসের প্রকোপ হ্রাস পেয়েছে, তবুও এটি প্রতিরোধে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

মেনিনজাইটিস কী?
মেনিনজাইটিস হল মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্কের চারপাশে আচ্ছাদনকারী ঝিল্লি প্রদাহ। মূলত জীবাণুর সংক্রমণের কারণেই এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক সকলেরই মেনিনজাইটিস হতে পারে, যদিও মেনিনজাইটিসের ধরণটি বয়স অনুসারে পরিবর্তিত হয়। মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কপর্দার প্রদাহ মস্তিস্ক বা সুষুম্নাকান্ডের আবরণকারী পর্দা বা মেনিনজেসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। মেনিনজাইটিস একটি জরুরী অবস্থা, যেখানে দ্রুত চিকিৎসা অপরিহার্য।

মেনিনজাইটিসের বিভিন্ন প্রকার ও কারণ :
মেনিনজাইটিস ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, প্রোটোজোয়ার ইত্যাদি কারণে হয়। মেনিনজাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হল ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাস। তবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বা ক্যান্সারের কারণেও মেনিনজাইটিস হতে পারে।

ক) ভাইরাল মেনিনজাইটিস:
মেনিনজাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হল ভাইরাল মেনিনজাইটিস। এটি নিজে থেকে নিরাময় হয়। ব্যাকটেরিয়া জনিত মেনিনজাইটিসের চাইতে কম ভয়ংকর। ভাইরাল মেনিনজাইটিসের প্রধান জীবাণু এন্টেরোভাইরাস। এর বাইরেও কিছু ভাইরাস এই রোগের সৃষ্টি করে যা মশার মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে অন্য জনের দেহে ছড়াতে পারে।
খ) ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস: এই ধরনের মেনিনজাইটিস সংক্রামক। ব্যাকটিরিয়া মেনিনজাইটিস স্ট্র্যাপ্টোকোকাস নিউমোনিয়া, নাইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস, হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিনেসিস এবং স্টেফিলোকোকাস অরিয়াসের মতো নির্দিষ্ট ধরণের ব্যাকটিরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে মারাত্মক অবস্থা হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু এবং ২০ থেকে ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণেই মারা যায়।
গ) ফাংগাল মেনিনজাইটিস: একটি বিরল ধরণের মেনিনজাইটিস, ফাংগাল মেনিনজাইটিস ক্রিপ্টোকোকাস, ব্লাস্টোমাইসেস, হিস্টোপ্লাজমা এবং কক্কিডায়োআইডেস ইমিটিসের মতো ছত্রাকজনিত কারণে ঘটে। ছত্রাকটি শরীরে সংক্রামিত হয় এবং রক্ত ​​প্রবাহে ছড়িয়ে যায়, সেখান থেকে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে যায়। রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা হ্রাসের ওষুধ সেবনকারী, এইডস/এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ও বয়স্ক মানুষ ফাংগাল মেনিনজাইটিসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘ) প্যারাসাইটিক মেনিনজাইটিস: প্যারাসাইটিক মেনিনজাইটিস অ্যাঞ্জিওস্ট্রংগিলাস ক্যান্টোনেনসিস, গ্যান্থোসটোমা স্পিনিজেরাম, সিস্টোসোমার মতো পরজীবীদের কারণে ঘটে। প্যারাসাইটিক মেনিনজাইটিস সরাসরি সংক্রামক নয়, এটি একটি ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে যায় না।
ঙ) জীবাণুবিহীন মেনিনজাইটিস: জীবাণুর বাইরেও কিছু কারণে মেনিনজাইটিস হতে পারে। শরীরে ক্যান্সারের বিস্তার, স্বয়ং-অনাক্রম্য ও কিছু বিশেষ ওষুধ সেবন করলে মেনিনজাইটিস হয়।

এই রোগের লক্ষণ :
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কয়েকদিনের মধ্যেই বিকাশ লাভ করে। ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি শুরুতে একই রকম হতে পারে।এই রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। শিশুদের মধ্যে ভাইরাল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি হল- জ্বর, বিরক্তি ভাব, খিটখিটে মেজাজ, অতিরিক্ত ক্লান্তি, খেতে অনীহা, ত্বকে লাল লাল র‍্যাশ, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভাইরাল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি হল- জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, আলো ও শব্দ অসহনশীলতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, খেতে অনীহা, ত্বকে লাল লাল র‍্যাশ, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি হঠাৎ বিকাশ লাভ করে, সেগুলি হল- বমি, জ্বর, বিরক্তি ভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, আলো ও শব্দ অসহনশীলতা, নিদ্রাহীনতা, ইত্যাদি। ফাংগাল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি হল- জ্বর, মাথাব্যথা, আলো ও শব্দ অসহনশীলতা, বমি, ইত্যাদি।
প্যারাসাইটিক মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলি ফাংগাল মেনিনজাইটিসের মতোই হয় এবং রোগীর শরীরে র‍্যাশ হতে পারে।

রোগনির্ণয় : চিকিৎসক বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ইতিহাসের ভিত্তিতে এই রোগ নির্ণয় করেন। এছাড়াও, চিকিৎসক মেরুদণ্ডের পাশাপাশি মাথা, কান, গলা এবং ত্বকের চারপাশের সংক্রমণও পরীক্ষা করেন।
রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (CT) এম আর আই(MRI), রক্ত ​​পরীক্ষা, চেস্ট এক্স-রে ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা : এই রোগে দায়ী পরজীবি শনাক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়া নিরোধক (অ্যান্টিবায়োটিক), ভাইরাস নিরোধক ( অ্যান্টিভাইরাল) অথবা ছত্রাক নিরোধক (অ্যান্টিফাঙ্গাল) ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও স্টেরয়েড এবং লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।

রোগ-প্রতিরোধের উপায় :
মেনিনজাইটিস ছড়িয়ে পড়া রোধ করার কিছু উপায়- ক) ভালো করে হাত ধোয়া উচিত
খ) স্বাস্থ্যকর থাকুন
গ) কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকা রাখুন
ঘ) গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ার অভ্যাস সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া উচিত
ঙ) এছাড়াও, টিকা গ্রহণের কারণে মেনিনজাইটিস প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়া : কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

সিজোফ্রেনিয়া : কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

সিজোফ্রেনিয়া হল একপ্রকার জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না ৷ রোগী বাস্তবতার বোধ বা উপলব্ধি হারিয়ে ফেলে, প্রায়ই হ্যালুসিনেশনে ভোগে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে অক্ষমতাজনিত অসুবিধার সম্মুখীন হন ৷

সিজোফ্রেনিয়ার প্রকারভেদ :
সিজোফ্রেনিয়া বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা – প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া, হেবিফ্রেনিক সিজোফ্রেনিয়া, ক্যাটাটনিক সিজোফ্রেনিয়া, সিম্পল সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। ১) প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া : এক্ষেত্রে, কোনও ব্যক্তির নির্দিষ্ট কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারণা, বিভ্রান্তি থাকতে পারে, হ্যালুসিনেশন হয়, যার সাথে বাস্তবতার কোনও সম্পর্ক নেই। যেমন- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে পারে যে, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লোকেরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, কেউ তাকে বিরক্ত করছে।
২) হেবিফ্রেনিক সিজোফ্রেনিয়া : এর মূল বৈশিষ্ট্য হল, এতে আক্রান্ত রোগীরা অগোছালো চিন্তাভাবনা এবং বিশৃঙ্খল আচরণ করে। এক্ষেত্রে রোগীর সাধারণত অসংলগ্ন এবং অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা থাকে। এটি দৈনিক ক্রিয়াকলাপ যেমন রান্না করা, খাওয়া, নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ইত্যাদিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৩) ক্যাটাটনিক সিজোফ্রেনিয়া : এই ধরনের সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী শারীরিকভাবে অদ্ভুত আচরণ করতে পারে, হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর পেশি চালনার ভঙ্গি অস্বাভাবিক হ​য়, যেমন- হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়া, নিশ্চুপ হয়ে অদ্ভুত ভাবে বসে থাকা,অকারণে মারামারি, অন্যরা যা বলছে তা বারবার বলা, ইত্যাদি।
৪) সিম্পল সিজোফ্রেনিয়া : এক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলি হালকা হয় এবং উগ্রতা প্রদর্শন করে না। যেমন- দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য ছোটখাটো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ :
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলি হল হ্যালুসিনেশন, ভুল ধারণা, অবাস্তব চিন্তাভাবনা, অকারণ সন্দেহ, বিভ্রান্তি, বিড়ম্বনা ইত্যাদি।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত সব রোগীর লক্ষণ এক হয় না। লক্ষণগুলি রোগীর ওপর নির্ভর করে। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলি কয়েক মাস বা বছর ধরে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে বা হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে। এই রোগের কিছু লক্ষণ হল-
ক) রোগী এমন কিছু শুনতে পায় বা দেখতে পায় যেটা বাস্তবে থাকে না
খ) কথা বলা বা লেখায় অদ্ভুত বা অযৌক্তিক ধরন, আচরণ
গ) গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদাসীন বোধ করা
ঘ) পড়াশুনায় বা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে অদ্ভুত পরিবর্তন
ঙ) ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং চেহারায় পরিবর্তন
চ) অযৌক্তিক, রাগ বা প্রিয়জনদের প্রতি ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া
ছ) ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা
জ) অনুপযুক্ত বা অদ্ভুত আচরণ

এই রোগীরা সকলেই প্রায় বাস্তবজগত থেকে বিচ্ছিন্ন। কারও কারও কথাবার্তায় প্রথম থেকেই স্বাভাবিকতা ও বাস্তববিমুখীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশন যাদের থাকে তাদের সাধারণ মানুষই অস্বাভাবিক এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্মাদ বলে বুঝতে পারে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর অসাধারণ জ্ঞান বাড়ির লোকেদের বিস্মিত করে, তাঁরা রোগীকে নিয়ে গর্বিত রোধ করেন। সিজোফ্রেনিয়ার পজিটিভ উপসর্গগুলি হল-

ডিলিউশন : এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ভুল ধারণা বা বিশ্বাস বহন করে, যার সাথে বাস্তবের কোনও মিল থাকে না। যেমন- কেউ তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।
হ্যালুসিনেশন: এমন কিছু দেখা, অনুভব করা, স্বাদ গ্রহণ, শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া যার আসলেই বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবাস্তব জিনিস অনুভব করে।
বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা এবং কথাবার্তা: এক্ষেত্রে রোগী খুব আকস্মিকভাবে একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যায়। রোগীরা বারবার কোনও কথা, শব্দ বা ছড়া পুনরাবৃত্তি করতে পারে।
বিশৃঙ্খল আচরণ: এক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর আচরণে সমস্যা হয়। যেমন- খুব দ্রুত চিন্তাধারা বদলানো, ভুলে যাওয়া, কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির পুনরাবৃত্তি, শব্দ বা অনুভূতি ঠিক মতো বুঝতে না পারা ইত্যাদি।

সিজোফ্রেনিয়ার কারণ :
এই রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে, যে যে কারণগুলিকে এই রোগের জন্য দায়ী করা হয়, সেগুলি হল-
ক) জেনেটিক বা বংশগত এই রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও দেখা যায়। বাবা, মা-এর মধ্যে কারুর এই রোগ থাকলে সন্তানেরও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
খ) ভাইরাস সংক্রমণ, মানসিকভাবে অত্যন্ত চাপগ্রস্থ পরিস্থিতি, ইত্যাদির কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গ) মস্তিষ্কে রাসায়নিক উপাদানের ত্রুটি এবং নিউরোকেমিক্যাল উপাদানে কোনও ঘাটতি হলে এই রোগ হয়।
ঘ) জন্মকালীন কোনও জটিলতা থাকলেও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঙ) গর্ভাবস্থায় কোনও মা যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এই রোগ হতে পারে।
চ) কিছু উত্তেজক মাদকদ্রব্য এবং ওষুধ এই রোগের কারণ।

এই রোগের চিকিৎসা :
এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম হল অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষুধ। এটি বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন থেরাপি ও মনোচিকিৎসাও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসা দ্বারা এর বিভিন্ন উপসর্গকে ভালো করা যায় এবং রোগীর সামাজিক সহায়তাও প্রয়োজন হয়।
এছাড়া, রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে তার মাথায় ইলেকট্রোড লাগানো হয় এবং ছোটো কারেন্টের শক দেওয়া হয়। এতেও রোগীর মানসিক অবস্থা এবং চিন্তার উন্নতি হয়।