by alamgir alam | Jan 21, 2021 | রোগ-ব্যাধি
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত জরুরি অবস্থাগুলোর একটি হলো হঠাৎ পেটব্যথা। একসময় আমাদের দেশে প্রচণ্ড পেটব্যথার অন্যতম কারণ ছিল গ্যাস্ট্রিক পারফোরেশন বা টাইফয়েডজনিত পারফোরেশন (অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া)। কিন্তু মানুষের সচেতনতা আর প্রাথমিক চিকিৎসাপদ্ধতির উন্নতির কারণে আজকাল আর এ ধরনের অন্ত্র ছিদ্র হওয়ার মতো রোগী বেশি পাওয়া যায় না। বরং আকস্মিক প্রচণ্ড পেটব্যথার একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস।
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস পেটের একটি জটিল ও জরুরি সমস্যা। এতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোগের উপসর্গ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেটব্যথা দিয়ে শুরু হয়ে থাকে বলে অনেকে তথাকথিত গ্যাস্ট্রিক ভেবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করে ফেলেন।
রোগের রহস্য
আমাদের পেটের ওপরে একটু পেছন দিকে ও বাম দিকে আছে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস। বিপাক ক্রিয়ার জন্য নানা ধরনের এনজাইম (উৎসেচক) নিঃসরণ থেকে শুরু করে ইনসুলিন ও নানা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি হয় এই প্যানক্রিয়াস থেকে।
প্যানক্রিয়াসে হঠাৎ প্রদাহ শুরু হলে তাকে বলা হয় অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস। আবার অন্য ধরনের একটি প্রদাহ আছে, ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও ব্যথা থাকে।
কেন হয় প্রদাহ
যাদের পিত্তথলি, পিত্তনালি অথবা প্যানক্রিয়াসের নালিতে পাথর আছে, তাদের প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ হতে পারে। এ ছাড়া যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড অনেক বেশি, আর যারা মদ্যপান করেন, তাদেরও এটা বেশি হতে দেখা যায়। পেটে কোনো অস্ত্রোপচার, প্রসিডিউর, আঘাত বা সংক্রমণ থেকেও হওয়া বিচিত্র নয়। পারিবারিক ইতিহাস ও স্থূলতার সঙ্গেও এর একটা সম্পর্ক আছে।
যেভাবে বুঝবেন
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে আকস্মিকভাবে পেটের ওপরের অংশে এবং মাঝখানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা ক্রমশই বাড়তে থাকে। সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ইনজেকশনে বা ব্যথানাশকেও কমে না। এই ব্যথা পেট থেকে পেছন দিকে পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে, প্রচুর বমি হতে পারে। অনেক সময় রোগী পেটব্যথার কারণে সামনের দিকে কুঁকড়ে বা কুঁজো হয়ে বসে থাকেন। কারণ, এতে একটু আরাম মেলে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে রোগী শকে চলে যেতে পারে। মানে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া, রক্তচাপ নেমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইনজেকশন ও শিরায় স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ব্যথা না কমা পর্যন্ত দু–এক দিন না খাইয়েও রাখার দরকার হতে পারে। কোনো কোনো জটিল রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়।
করণীয়
উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া উচিত। উপসর্গ বিবেচনায় চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের ব্যাপারে সহজেই নিশ্চিত হতে পারেন। সাধারণত রক্তের কিছু পরীক্ষা (অ্যামাইলেজ, লাইপেজ) এবং কিছু ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম অথবা সিটি স্ক্যান করে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগটি সহজেই নির্ণয় করা যায়।
এই রোগের চিকিৎসা ঠিকমতো করা না হলে কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হওয়া (অর্গান ফেইলিউর), পেটে পানি আসা, রক্ত বমি হওয়া, প্যানক্রিয়াসে সিস্ট হওয়া, পুঁজ হওয়া ইত্যাদি। তা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস বা বারবার অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের জটিলতা হিসেবে ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইসিস এবং ডায়াবেটিস হতে পারে।
যেভাবে চিকিৎসা
রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। ব্যথানাশক ইনজেকশন, শিরায় স্যালাইন, দরকার হলে শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নিবিড়ভাবে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, প্রস্রাবের পরিমাণ, রক্তের খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, অ্যালবুমিন, সুগার ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা দরকার হয়।
প্রাথমিক ব্যথা ও ধাক্কা কেটে গেলে সমস্যার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। পিত্তথলিতে সমস্যা, পিত্তনালি বা অগ্ন্যাশয়ের নালিতে পাথর থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ওজন ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে কমানো উচিত।
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস পেটের একটি জরুরি সমস্যা। অবহেলা করলে এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই তীব্র ও অস্বাভাবিক পেটব্যথা হলে অযথা এর–ওর পরামর্শে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি সেবন করে কালক্ষেপণ করবেন না। পেটব্যথা কেন হচ্ছে, জানতে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
এ ধরনের জরুরি সমস্যায় দ্রুত কাছের হাসপাতাল, পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রাকৃতিক চিকিৎসা
এই ধরনের সমস্যার জন্য যে কাজটা প্রথম করতে হয় তা হলো ডিটক্সিফিকেশন অর্থাৎ স্বাভাবিক কোন খাবার না খেয়ে শুধু লেবু ও কুসুম গরমপানি খেয়ে তিনদিন পার করা, এই তিনদিনে লেবু পানি ছাড়া প্রতিদিন ডাবের পানি পান করতে হবে দিনে দুবার। এতে দেহ টক্সিনমূক্ত হয়ে যাবে, পেটের ব্যথাও কমে যাবে। তারপর একটি সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে হবে যা আপনার পেটের সমস্যাগুলো ঔষধ ছাড়াই সঠিক উপায়ে কাজ করতে পারে।
আলমগীর আলম
by alamgir alam | Jan 21, 2021 | জীবনযাপন
দিনের প্রথম খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন শেষ খাবারও সময়মতো খাওয়া উচিত। রাতে আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার সুস্থতা, ওজন বাড়া বা কমা। যদি আপনি অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ক্যালোরি খরচ না করেন, তাহলে দিনের শেষে ওজন কিন্তু বেড়েই চলবে।
তাই আপনি কী খাচ্ছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কোন সময়ে খাবারটা গ্রহণ করছেন। আমাদের শরীরের ভিতর কোনও ঘড়ি নেই, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ ছন্দ রয়েছে যেটা অনুযায়ী এটি শরীরের প্রধান কার্যগুলি নির্ধারণ করে। ‘সারকাডিয়ান রিদম’ বলা হয় যাকে। এর ফলে আমাদের শরীরের পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন, হজম, ঘুম এবং অন্যান্য অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
মোট কথা হল, দেহের ওজন, মেটাবলিক রেগুলেশন, হার্টের স্বাস্থ্য এবং ঘুম নির্ভর করে আপনার খাওয়ার সময়ের ওপর। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা সবসময় তাড়াতাড়ি ডিনার এবং তাড়াতাড়ি ঘুমানোর পরামর্শ দেন। তাদের মতে, রাতের খাবার সন্ধে সাতটার মধ্যে খেয়ে নেওয়া উচিত। তাড়াতাড়ি ডিনার করার উপকারিতা রয়েছে আরও। দেখে নিন সেগুলি।
১) ওজন কমাতে
তাড়াতাড়ি ডিনার করলে সবথেকে ভালো যেটা হবে সেটা হল ওজন কমবে। ওজন কমাতে আমরা কী না করি – এক্সারসাইজ, দৌড়ানো, পরিমিত খাওয়া। কিন্তু এসবের থেকে বেশি ভালো কাজ দেবে যদি সময়ে খান। পুষ্টিবিদরা বলেন, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যে ৭টার মধ্যে খাওয়া শেষ করা উচিত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে নিলে আপনার দেহ খাবারগুলির সঠিক ব্যবহার করতে পারবে।
২) সুস্থ্যতা ঝুঁকি হ্রাস করে
দেরি করে রাতের খাবার খেলে, আপনি যে ক্যালোরি গ্রহণ করছেন সেটা আপনার শরীর কোনও কাজে লাগাতে পারবে না। ফলে মোটা হতে থাকবেন আপনি। ক্যালোরি খরচ না হলে সেটা ফ্যাট আকারে জমতে শুরু করবে। যার ফলে ওজন বাড়বে দ্রুত।
৩) তাড়াতাড়ি ডিনার করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে যারা ডিনার করেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে, ২৬ শতাংশ প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় তাড়াতাড়ি ডিনার করলে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
৪) এনার্জি বাড়ে, মুড ভালো থাকে
তাড়াতাড়ি ডিনার সারলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করার জন্য অনেকটা সময় পেয়ে যাবে আপনার শরীর। যার ফলে আপনি কম ক্লান্ত বোধ করবেন এবং বিরক্ত ভাব কম আসবে আপনার মধ্যে। তাড়াতাড়ি ডিনার করলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আপনি এনার্জিতে ভরপুর থাকবেন। স্ন্যাকস খেয়েও কমবে ওজন! জেনে নিন কোন স্ন্যাকসগুলো খাবেন
৫) হজম ক্ষমতা বাড়ায়
ঘুমানোর ঠিক আগে ডিনার করলে খাবার পুরোপুরি হজম হয় না। যার ফলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস, অম্বল, পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। এসবই বদহজমের কারণে হবে। ডিনার আর ঘুমের মাঝে যত বেশি সময় থাকবে তত আপনার পাচনতন্ত্র ভালো কাজ করবে।
৬) ভালো ঘুম
ভালো ঘুমের জন্য তাড়াতাড়ি ডিনার করা দরকার। ডিনারের পরই আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার পাচনতন্ত্র কাজ করতে থাকে, যা আপনার REM বা গভীর ঘুমে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে অস্থিরতা বা নিদ্রাহীনতা দেখা দেবে।
৭) হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে
যত দেরিতে ডিনার করবেন, তত বেশি খাবার খাবেন আপনি। দেরিতে খেলে ক্যালোরি নষ্ট হয় না, এবং সেটা ট্রাইগ্লিসারাইডসে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ট্রাইগ্লিসারাইডস হল এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণ। তাড়াতাড়ি ডিনার করলে এই ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে না!
আলমগীর আলম
by alamgir alam | Dec 1, 2019 | বিশ্ব স্বাস্থ্য, রোগ-ব্যাধি
অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমটি গাট ফারমেন্টেশন সিনড্রোম নামেও পরিচিত। অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোম একটি বিরল অবস্থা, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সিস্টেমে গাঁজনের মাধ্যমে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ইথানল উৎপান্ন করে। আপনি যখন খাবার হজম করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরে কিছু ইথানল উৎপান্ন হয়। তবে সে পরিমাণটা খুবই সামান্য। কিন্তু যখন আপনার শরীরে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া থাকে, তখন এটি চরম মাত্রায় অ্যালকোহল তৈরি করতে পারে
মদ না খেয়েও মাতাল হওয়ার অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ৪৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির পাকস্থলীতে বাসা বাঁধা ছত্রাকের কারণে শর্করা পরিণত হচ্ছিল অ্যালকোহলে। এতে তার স্মৃতিবিভ্রাট হতে থাকে। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি মাথাঘোরার রোগও বাসা বাঁধে শরীরে। গবেষকরা বিরল এ রোগকে বলছেন অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোম। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি কেস রিপোর্টে এ ঘটনা উঠে এসেছে।
বিএমজে ওপেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি কেস রিপোর্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে ওই ব্যক্তির আঙুলে একটি চোট লেগেছিল। তারপর এক চিকিৎসকের পরামর্শে কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছিলেন তিনি। এরপর তার স্মৃতিবিভ্রাট, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও মাথাঘোরা রোগ শুরু হয়।
এরপর ২০১৪ সালে ওই ব্যক্তিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ব্রেথলাইজার টেস্টে ধরা পড়ে তার শরীরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অ্যালকোহল থাকার বিষয়টি। কিন্তু ওই ব্যক্তির দাবি ছিল যে তিনি মদ্যপান করেননি। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে এ ধরনের বিপত্তি ঘটতে থাকে। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করেন, মদ না খেলেও তার শরীরে অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়ছে। তিন বছর ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে নিউইয়র্কের রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি।
তার পরই জানা যায়, তার শরীরে থাকা অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোম নামে বিরল রোগের কারণে এ অভিনব ঘটনা ঘটছে। তার পায়খানা পরীক্ষা করে স্যাকারোমাইসিস সেরাভিসি নামে বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক পাওয়া যায়। সে ছত্রাকটি ব্যবহার করেই শর্করাকে অ্যালকোহলে পরিণত করেন বিয়ার নির্মাতারা। তার পাকস্থলীতেই বিশেষ ধরনের ওই ছত্রাকটি রয়েছে। ফলে তিনি যখনই শর্করাজাতীয় খাবার খান, তখনই তা অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এরপর তাকে ছত্রাকবিরোধী ওষুধ দেয়া হয় এবং ছয় সপ্তাহ ধরে শর্করাজাতীয় খাবার বন্ধ করতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তবে এ ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের এক নারী অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হন এবং ‘মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে’ পুলিশের হাতে আটক হয়ে খবরের শিরোনাম হন। টেক্সাসের এক ব্যক্তিও বিরল এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের সবারই আইনি সীমার চেয়ে অ্যালকোহলেন মাত্রা পাঁচ গুণ বেশি ছিল।
অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমটা আসলে কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বিভাগ বলছে, অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমটি গাট ফারমেন্টেশন সিনড্রোম নামেও পরিচিত। অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোম একটি বিরল অবস্থা, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সিস্টেমে গাঁজনের মাধ্যমে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ইথানল উত্পন্ন করে।
আপনি যখন খাবার হজম করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরে কিছু ইথানল উত্পন্ন হয়। তবে সে পরিমাণটা খুবই সামান্য। কিন্তু যখন আপনার শরীরে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া থাকে, তখন এটি চরম মাত্রায় অ্যালকোহল উত্পন্ন করতে পারে।
যেকোনো ব্যক্তিই এই অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ক্রোহন রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে।
অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমের লক্ষণ
এটার প্রধান লক্ষণ হলো অ্যালকোহল পান না করেই মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে। এর সঙ্গে বমিভাব, ঢেঁকুর তোলা, মাথাঘোরা, শরীরের ভারসাম্য হ্রাস এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এমন রোগীদের সাধারণত উচ্চ চিনি ও কার্বোহাইড্রেট ডায়েট থাকে।
অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোমের চিকিৎসা
বিরল এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। শুরুতে রোগীর তীব্র অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন। তারপরে এ লক্ষণগুলো সৃষ্টির জন্য দায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো, এ রোগীর লক্ষণগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত উচ্চ প্রোটিন ও কম মাত্রার কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া। এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রোবায়োটিকগুলোকে অনুসরণ করে।
তবে এ রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ ঝুঁকি আরো বাড়াতে পারে। যে কেউ পুনরায় এ রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ কারণে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরিপূর্ণ চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
কেস রিপোর্টের ওই ব্যক্তি এখন কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে পারেন এবং সে উপসর্গগুলো এখন আর নেই। কিন্তু কী কারণে তার এ রোগ হতে পারে? চিকিৎসকরা মনে করছেন, আঙুলে আঘাতের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘ কোর্স তার এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। এটা তার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।
সূত্র: প্রিভেনশন
by alamgir alam | Sep 8, 2019 | পাতা
রসিয়ে রসিয়ে মনের আনন্দে পান খান অনেকেই। কেউ কেউ নিয়মিত খেয়ে থাকেন আবার কেউ মাঝে মধ্যে খান। অনেকে আবার মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য পান চিবিয়ে থাকেন। এই পানের সঙ্গে সুপারি যেমন থাকে তেমনি থাকে অন্যান্য উপাদেয় সামগ্রী। পান তো স্বাদ বা মজার জন্য খেলেন, জানেন কি এর কত উপকার?
দেহের ক্লান্তি ও স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য কয়েকটা পান পাতার রস এক চামচ মধু দিয়ে খেলে নাকি তা টনিকের মতো কাজ করে। খাবার হজম হতে সাহায্য করে। পান পাতা সেবনে দেহের চর্বি বা মেদ এবং ওজনও কমে বলে জানা গেছে।
এবার জেনে নিন পান খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা-
হজমে সাহায্য করে
পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। যার ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয়।
যৌন শক্তি বাড়ায়
এটি একটি পুরনো প্রথা তবে কার্যকর। পানের রস যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। আগেকার দিনে নববিবাহিতরা বেশি বেশি পান খেতেন।
গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করে
পান খেলে পেটে বায়ু জমে কম। যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টির সুযোগ পায় না। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরিও রোধ করে। যার ফলে পেট ফাঁপে না।
জন্মরোধ করে
পান গাছের শিকড় বেটে রস করে খেলে ছেলেপুলে হয় না। জন্ম নিরোধক বড়ি না খেয়েও এটা জন্মনিয়ন্ত্রণে সেবন করা যায়। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এর প্রমাণও মিলেছে।
উঁকুন মারে
মাথায় উঁকুন হলে গোসলের কিছুক্ষণ আগে পান পাতার রস মাথায় লাগিয়ে বসে থাকলে উঁকুন মারা যায়। এ কাজে ঝাল জাতীয় পান হলে ভালো হয়।
ফোঁড়া ফাটায়
পান পাতার চকচকে সবুজ পিঠে ঘি মাখিয়ে একটু সেঁক দিয়ে গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে দিলে দ্রুত ফোঁড়া পেকে ফেটে যায়। আবার পাতার উল্টো পিঠে ঘি মাখিয়ে একইভাবে বসিয়ে রাখলে তা পুঁজ টেনে বের করে আনে। ঘিয়ের বদলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করেও একই ফল পাওয়া যায়।
চর্মরোগ সারায়
দেহের কোথাও চুলকানি বা পাঁচড়া হলে সেখানে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা ভাল হয়ে যায়।
মুখ ও দাঁতের উপকার করে
দাঁতের মাঢ়ি দূষিত হলে ফুলে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে কুলকুলি করলে ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে যায়। মুখগহ্বরে কোনো ক্ষত হলে পানের রসে তার উপশম হয়। পানের রসে এসকরবিক এসিড আছে যা একটি চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটা মুখের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।
নখের ব্যথা সারায়
অনেক সময় নখের কোণায় ব্যথা হয়। এ অবস্থায় সেখানে কয়েক ফোঁটা পানের রস দিলে ব্যথা চলে যায়।
আঁচিল দূর করে
শরীরে আঁচিল হলে তার উপর কয়েক দিন পানের রস লাগান। এতে তা ধীরে ধীরে খসে পড়বে আঁচিল এবং ওই জায়গায় আর তৈরিও হবে না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ফলে পানে রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য।
সর্দি বের করে
বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস কার্যকর। এ ক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে কয়েক দিন খেতে হবে। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে যাবে।
মাথা ব্যথা দূর করে
মাথা ব্যথা হলে কপালে পানের রস লেপে দিলে দ্রুত মাথা ব্যথা কমে যায়।
ক্ষত ও ব্যথা সারায়
পানের বেদনানাশক ও ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেতে হবে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে এর রস খেলেও এ উপকার মিলবে।
ঠাণ্ডা লাগা দূর করে
ঠাণ্ডা লাগা সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয়। এক্ষেত্রে পানপাতা গরম পানি দিয়ে ছেঁচে রস বের করতে হবে। এ রসের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও আদার রস মিশিয়ে খেতে হবে।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
পাকস্থলী গড়বড় হলে সবই উল্টে যায়। খিদেও লাগে না। পাকস্থলীতে অম্লমান বা পিএইচের মাত্রা স্বাভাবিক না থাকলেই এরূপ হয়। পান তা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও ক্ষুধা বাড়বে।
এন্টিসেপটিকের কাজ করে
কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সেখানে পানের রস লাগিয়ে দিলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। পান পাতা পলিফেনল বিশেষত চাভিকল নামক রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ। এটা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া সেখানে ফোলাও বন্ধ করে, ব্যথার উপশম করে।
পিঠে ব্যথার উপশম করে
নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। শোয়া থেকেও হয়। বয়স্কদের এ সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। মাংসপেশির টান থেকেও এরূপ ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা জায়গায় পান পাতা দিয়ে সেঁক দিলে উপকার মেলে। এ ছাড়া পান পাতার রসের সঙ্গে নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা কমে।
মূত্র স্বল্পতা ও মূত্রকৃচ্ছতার উপশম করে
যাদের কম প্রস্রাব হয় বা প্রস্রাব করতে গেলে কষ্ট হয় তারা পান পাতার রস সেবন করে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ১টি পান পাতা ছেঁচে রস করে নিতে হবে। সেই রস একটু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে উপকার হবে। এতে দেহে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে ও মূত্রকৃচ্ছতা চলে যাবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। একটু ঠাণ্ডা হলে তাতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করুন। রোজ এটি খেতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
শিশুদের পেট ব্যথা কমায়
পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাঁদতে থাকে। বড় শিশুরা পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেঁক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর পর এভাবে কয়েকবার সেঁক দিলে পেটে ব্যথা কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে সেঁকের সময় তাপটা যেন বেশি না হয়।
পোড়া সারায়
পুড়ে গেলে সেখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়। পোড়া জায়গায় পান পাতা বেটে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার উপশম হবে ও পোড়া জায়গা শুকিয়ে যাবে।
তবে পানের কিছু দোষও রয়েছে। পানের নতুন পাতা শ্লেষ্মা বাড়ায়। পান হজম করে বটে তবে বেশি খেলে অজীর্ণ হয়। পানের বোঁটা ও শিরার রস ইন্দ্রিয়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। তাই পানের বোঁটা খাওয়া উচিত নয়। যারা রুগ্ন, দুর্বল, ক্ষীণ স্বাস্থ্যের তারা পান খাবেন না। মূর্চ্ছা রোগী, যক্ষ্মা রোগী ও যাদের চোখ উঠেছে তারও পান খাবেন না।
আলমগীর আলম
ন্যাচারোপ্যাথি ও আকুপ্রেসার বিষেশজ্ঞ
২৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা
01611010011
by alamgir alam | Jul 14, 2019 | আকুপ্রেসার
নিজের হাতের তালু ও আঙুলগুলির দিকে ভাল করে তাকান। কী দেখতে পাচ্ছেন? উত্তরে যদি বলেন, শুধু হাতটাই দেখছেন, তাহলে ভুল দেখেছেন। কারণ আপনার হাতেই লুকিয়ে রয়েছে জাদু। না, সেই জাদু প্রয়োগের জন্য আপনাকে পেশাদার জাদুকর হতে হবে না। খাবার খাওয়া, লেখালিখি, বুনন ইত্যাদির জন্য যেমন নিজের হাতকে ব্যবহার করেন, তেমনভাবে একে কাজে লাগিয়ে মুক্তি পেতে পারেন বিভিন্ন রোগ যন্ত্রণা থেকেও। অর্থাৎ হাতের সঠিক ব্যবহার জানা থাকলে কথায় কথায় আর ওষুধ খেতে হবে না। রাতবিরেতে ডাক্তারের কাছেও ছুটতে হবে না। গবেষণা বলছে, নিখরচায় সুস্থ জীবনযাপন করতে আপনার হাত বড় ভূমিকা নিতে পারে। ভাবছেন তো, এমনটা কীভাবে সম্ভব?
বুড়ো আঙুল: মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা? কোনও কারণে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আছেন? এর কারণ হতে পারে আপনার বুড়ো আঙুল। বাঁ-হাতে বুড়ো আঙুলকে ডান হাত দিয়ে (অথবা উলটোটা) পাঁচ মিনিটের জন্য চেপে ধরে থাকুন। পাঁচ মিনিট পর যন্ত্রণা অনেকটাই কম অনুভূত হবে।
তর্জনি: হতাশা, ভয় এবং লজ্জা দূর করতে এই আঙুলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি পেশির কোনও অংশে ব্যথাও দূর করতে পারে হাতের এই আঙুল। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, রোগীদের পিঠ ও পেশির ব্যথার দারুণ কাজ দেয় আঙুলের রিফ্লেক্স থেরাপি। এর জন্য একইভাবে পাঁচ মিনিটের জন্য তর্জনিকে চেপে ধরে রাখতে হবে।
মধ্যমা: ধরুন, প্রেমিকের সঙ্গে মন কষাকষি বা দাম্পত্য কলহে বেশ মেজাজ গরম। অথবা অন্যান্য দিনের থেকে বেশি খাটনি হওয়ায় বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। গবেষণা বলছে, এর থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন মধ্যমার এক্সারসাইজ। পাঁচ মিনিট মধ্যমা চেপে ধরে রাখলে রক্তচাপ খানিকটা কমে। যা আপনার মাথা ঠান্ডা করে আপনাকে শান্ত করে।
অনামিকা: দুশ্চিতা ও দুঃখ দূর করতে দারুণ কাজ দেয় রিফ্লেক্স থেরাপি। যা প্রয়োগ করতে হয় অনামিকার উপর। পাঁচ মিনিট আঙুলটি চেপে ধরে রাখলেই অনেকটা স্বস্তি বোধ করবেন আপনি। পরীক্ষা করে দেখুন, আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত স্বাভাবিক হবে।
কনিষ্ঠা: খারাপ চিন্তা, ক্লান্তি দূর করতে পারে কনিষ্ঠা। পাঁচ মিনিট কনিষ্ঠা চেপে রাখার সময় অবশ্যই মনে মনে ভাল কিছু চিন্তা করুন।
হাতের তালু: এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে রাখুন। এবার খুব ধীরে ধীরে গোল করে তালুতে মাসাজ করুন। এই প্রক্রিয়ার সময় জোরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিন। রিফ্লেক্সোলজিস্টদের মতে, আপনার আবেগ ও অনুভূতি তালুতে বন্দি থাকে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত তালুতে মাসাজ করলে ক্লান্তি, ডায়রিয়া এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্যও দূরে থাকে।
জোড়া তালু: সাধারণত ধ্যান করার সময় হাত জড়ো করা হয়ে থাকে। এতে মনোসংযোগ বাড়ে। হাতের তালু পরস্পরের সঙ্গে চাপলে শরীরের রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকে।
সূর্য মুদ্রা: হাত সোজাভাবে রেখে শুধু অনামিকা তালুতে ঠেকিয়ে রাখা সূর্য মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। এই প্রক্রিয়া হজম শক্তি ও খিদে বাড়ায়।
Alamgir Alam
Expert of Acupressure and Naturopathy
29 Bangabandhu Avenue, 2nd Floor, Dhaka