যে প্রাকৃতিক টনিকে শরীরের প্রদাহ দূর হবে

শরীরে আঘাতের কারণে প্রদাহ হয়ে থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে; কিন্তু এই প্রদাহই আবার ধীরে ধীরে ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়। এর কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার নিয়ে চলেছ গবেষণা।

আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত প্রদাহের সঙ্গে টিকে থাকে। শরীর ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করতে প্রদাহজনিত কোষ পাঠায়। এসব কোষ ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে বা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু নিরাময় করে। প্রদাহ সংক্রমণ ও টিস্যুর ক্ষতি শরীরের প্রতিক্রিয়ারই অংশ। এ ছাড়া এটি নিরাময়প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত নেক্রোটিক কোষ ও টিস্যু পরিষ্কার আর মেরামত শুরু হয়।

প্রদাহের দুটি ভাগ আছে। অ্যাকিউট বা তীব্র ও ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র প্রদাহ হলো ‘ভালো’ প্রদাহ, যা অচেনা আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করে এবং আঘাত নিরাময় করে।
অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হলো কেউ অসুস্থ বা আহত না হলেও শরীর প্রদাহজনক কোষ পাঠালে সেটা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হতে পারে। প্রদাহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণ, যেমন আর্থ্রাইটিস, আলঝেইমার ইত্যাদি। এটা নির্ণয় করতে আমাদের এই দুটি টেস্টের প্রয়োজন হয়—সি–রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট (ইএসআর)। এই দুটি টেস্টের মাধ্যমে শরীরে কী পরিমাণ ইনফ্লামেশন আছে, তা বোঝা যায়। আমাদের শরীরে ইনফ্লামেশন আছে কি নেই, তার লক্ষণগুলো হলো কোনো জায়গা ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা, গরম হয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা। এই পুরো প্রক্রিয়াই ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের আকারে ধরা দেয় আমাদের কাছে। ইনফ্লামেশনের যন্ত্রণা অনেক সময় আমরা সহ্য করতে পারি না। তবে প্রাথমিকভাবে শরীরের ভালোর জন্যই তৈরি হয় ইনফ্লামেটরি রেসপন্স।

প্রদাহের কারণে নানা রোগ হতে পারে। বিশেষত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সঙ্গে যুক্ত রোগগুলো হলো ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, আলঝেইমার, আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, বাত, গাউটি আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।

আমরা সকালে একটা রুটিন দিয়ে দিন শুরু করি। একটু যোগব্যায়াম, হাঁটা বা ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করি। অনেকের আবার নিয়মিত লেবুপানি পান করে দিন শুরুর অভ্যাস আছে। একটি কাজ করলে কিন্তু আমাদের জীবনের অনেক গুণগত পরিবর্তন আনতে পারি।

গবেষণায় জানা যায়, লেবু অর্থাৎ সাইট্রাস ফল অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-ক্যানসার, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-অ্যালার্জি ক্রিয়াকলাপগুলোর পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার, নিউরোপ্রোটেক্টিভ, হেপাটোপ্রোটেক্টিভ, স্থূলতা নিয়ন্ত্রণসহ প্রচুর জৈব ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করে। লেবু প্রকৃতপক্ষে দিনের শুরুতে খাওয়ার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর উপাদান। সেই সঙ্গে হলুদের গুঁড়া যুক্ত করলে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত হতে পারে। আর এই দ্রবণে দারুচিনি ও মধু যোগ করতে পারলে সেটা হবে সোনায় সোহাগ। শরীরের জন্য এই তরল হয়ে উঠবে অমৃত টনিক।

যে কারণে টনিক হয়ে ওঠে

হলুদ (Curcuma longa) হলো ঐতিহ্যবাহী ওষুধ, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, স্থূলতা, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত। সিকেডি (দীর্ঘস্থায়ী কিডনিরোগ) ও ইএসআরডি (শেষ পর্যায়ের রেনাল ডিজিজ) বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। হলুদের একটি সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন এ ক্ষেত্রে কার্যকর বলে কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত।

কারকিউমিন প্রদাহ উপশম করতে পারে, প্রদাহের ভূমিকাপালনকারী বিভিন্ন অণুকে বাধা দিয়ে এর প্রদাহবিরোধী কার্যকলাপ প্রয়োগ করতে পারে। কারকিউমিন ক্যানসার প্রতিরোধে একটি বিকল্প পদ্ধতি। কারকিউমিনের থেরাপিউটিক প্রয়োগ নিয়ে এএপিএস জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষার পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কারকিউমিন বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, আর্থ্রাইটিস, পেপটিক আলসারসহ অনেকগুলো রোগের বিরুদ্ধে কার্যকারিতার সম্ভাবনা দেখিয়েছে। আলসার, সোরিয়াসিস, এইচ পাইলোরি সংক্রমণ, আলঝেইমার, ক্রনিক করোনারি সিনড্রোম, এথেরোস্ক্লেরোসিস, ডায়াবেটিস ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।

টনিকের উপকরণ ও বানানোর উপায়

এক চা–চামচ লেবুর রস
আধা চা–চামচ হলুদগুঁড়া (প্যাকেটজাত গুঁড়া নয়)
আধা চা–চামচ মধু
এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ দারুচিনিগুঁড়া
এক কাপ কুসুম গরম পানি

এক কাপ গরম পানিতে লেবুর রস, হলুদ ও মধু দিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এর ওপরে দারুচিনিগুঁড়া দিয়ে আবারও নেড়ে নিয়ে পান করতে হবে। তবে পান করার সময় বারবার নাড়তে হবে, যাতে হলুদ কাপের নিচে জমে না থাকে।
এই টনিক দিয়ে দিন শুরু করি, সকাল থেকেই শরীর চাঙা রাখি এবং নিজের শরীর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখি।

লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Share

Recent Posts

পেট ভালো রাখতে মেনে চলুন আইবিএস ডায়েট

আপনি যদি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব, গ্যাসসহ হজমের লক্ষণগুলো কাটিয়ে উঠতে চান, তবে আইবিএস ডায়েট অনুসরণ করার চিন্তা করতে পারেন। কারণ,… Read More

February 3, 2024

এই শীতেও কেন শসা খাবেন?

শসার রয়েছে নানা উপকারিতা। তবে সময় বুঝে খেলে তবেই কাজে লাগবে। না হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের কারণে… Read More

January 24, 2024

উপকারী ভেষজ চা বানাবেন যেভাবে

ভেষজ চা চিত্তাকর্ষক পুষ্টিমান, স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হয়। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অসুস্থ হওয়ার… Read More

January 20, 2024

This website uses cookies.