সুষনি ঔষধি গুণ সম্পন্ন শাক

সুষনিশাক বা সুনসুনি শাক গ্রামে অনেকের পরিচিত শাক। এই শাকের পাতা অনেক নরম ও পাতলা হয়। পাতার রং সবুজ নরম ও সরু ডাল বিশিষ্ট ঘাস বিশিষ্ট। থোকা থোকা জন্মে থাকে। একটি ডালে একটি পাতা হয়। শাক হিসাবে জনপ্রিয় এর বৈজ্ঞানিক নাম Marsilea minuta ও পরিবার  Marsileaceae.

রোগ প্রতিকারে

১. শ্বাস রোগে (হাঁপানিতে): কফের প্রাবল্য নেই অথচ শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট, আয়ুর্বেদের চিন্তাধারায় এটা বায়ু প্রধান শ্বাস রোগ, এ ক্ষেত্রে সুষণ শাকের রস ৪/৫ চামচ একটু গরম করে অথবা কাঁচা হলে ৮-১০ গ্রাম, আর শুকনো হলে ৩-৪ গ্রাম ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় খেলে শ্বাসকষ্টের অনেকটা লাঘব হয়, তার সঙ্গে নিদ্রাও ভাল হয়।

২. জ্বালা মেহে: প্রস্রাবে জালা, তার সঙ্গে কিছু ক্ষরণও হচ্ছে—এ ক্ষেত্রে উপরিউক্ত মাত্রায় ও ঐ পদ্ধতিতে তৈরি করে তিন চার দিন খাওয়ার পর থেকেই উপকার বুঝতে পারবেন।

৩. অল্প মেধায়: বাল্যকাল থেকে মেধা কম, সে ক্ষেত্রে এই শাক বেশ কিছুদিন অন্তত ৩-৪ মাস নিয়মিত খাওয়াতে হয়; তবে তার মাত্রা বয়সানুপাতে নিতে হবে। তবে এই শাক শুকিয়ে গুড়ো করে, ছেঁকে নিয়ে খেলেও চলে; এটার মাত্রা পূর্ণবয়স্কের ২ গ্রাম নিতে হয়; জলসহ না খেয়ে অন্তত আধকাপ দুধ আর একটু চিনি মিশিয়ে খেলে খুবই ভাল হয়।

৪. বিস্মৃতিতে: বয়সের ধর্মে এটা আসে; তার কারণ মূর্ধা থেকে যে সব বর্ণের উচ্চারণ হয় যেমন র, ড়, ল প্রভৃতি বর্ণ যেসব শব্দের আদিতে থাকে, বয়স বেশি হলে এগুলি মনে পড়তে চায় না—সে ক্ষেত্রে সুষুণী শাকের রস দিয়ে ঘি পাক করে প্রত্যহ ২-১ চামচ করে কিছুদিন খেলে ঐ অসুবিধেটা আস্তে আস্তে চলে যায়। এটা বালকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করানো চলে। ব্রাহ্মী ঘৃতের প্রতিনিধিও এটি।

৫. অনিদ্রায়: কোনো কারণ বা অবান্তর কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা, শুয়ে থাকলেও ঘুম আসে না; আবার কারও কারও তন্দ্রা আসার মুখে চমকে উঠে ঘুম ভেঙে যায়, অবান্তর চিন্তায় মন ভারাক্রান্ত, শরীর উদ্বেগগ্রস্ত, সে ক্ষেত্রে কাঁচা হলে ১৫ গ্রাম আর শুষ্ক হলে ৩/৪ গ্রাম ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ২-৪ চামচ দুধ মিশিয়ে প্রত্যহ সন্ধ্যেবেলা খেলে ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে।

৬. উচ্চ রক্তচাপে: ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকলে কাঁচা শাক আন্দাজ ১২ গ্রাম বেটে, জলে গুলে, ছেকে নিয়ে একটু, মিছরি বা চিনি মিশিয়ে সরবৎ করে খেতে হয়; তবে ডায়াবেটিস থাকলে অথবা অম্লরোগ থাকলে কোনো মিষ্টি দেওয়া চলবে না; আর শাক শুকিয়ে গেলে ৩/৪ গ্রাম আন্দাজ ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওটাকেই সরবৎ করে খেতে হয়; তবে সিদ্ধ করার পূর্বে একটু থেঁতো করে দেওয়াই ভাল।

৭. রমণ প্রয়াসের শৈথিল্যে: মেদোবহ স্রোত দুষিত হলে এবং তার জন্য অগ্নিমান্দ্য, অরুচি, পিপাসা থাকলে সুষুণী শাকের রস অথবা শাক বেঁটে সরবৎ করে খেলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে কিছুটা ফল উপলব্ধি করা যায়।

৮.দাহ রোগে: শাকের রস অথবা শাক বাটা গায়ে মেখে কিছুক্ষণ বাদে স্নান করলে স্নায়বিক কারণে সর্ব শরীরের দাহ প্রশমিত হয়।

৯. কীট দংশনে: বিষাক্ত কীটের দংশনের জ্বালায় সুষুণীর রস অথবা শাক বাটা ওখানে লাগালে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওখানকার জ্বালা কমে যায়।

১০. রক্তপিত্তে: সুষুণীশাক ঘিয়ে ভেজে খেতে বলা আছে সশ্রুত সংহিতায় _ আবার ভাবপ্রকাশে রক্তপিত্তে এই শাকটিকে প্রয়োগ করতে নিষেধ করেছেন (এই গ্রন্থটির প্রণেতা ভাবমিশ্র, এটি ষোড়শ শতকের গ্রন্থ)।

১১.অপস্মারে (Epilepsy): শুকনো সুষুণী শাক ৪ গ্রাম এবং জটামাংসী ২ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে থাকতে নামিয়ে, চটকে, ছেকে ঐ জল সকাল ও বৈকালে ২ বারে খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ রোগ প্রশমিত হয়। এই ভেষজ দুটির ঘন সারকে উপাদান করেই কোনো কোনো স্থলে বিশেষ ধরণের অপস্মারহারক বটিকা নামে প্রচার করার পিছনে ভারতীয় এই ভেষজ দুটি আজ জনসাধারণের গোচরীভূত।

রাসায়নিক গঠন:
(a) ketonic constituents viz, marsiline, 3-hydroxytriacontane.
(b) Alcoholic constituents viz, hentiacontan-l6-01.
(c) Sterol viz., betasitosterol.
(d) Mixture of normal hydrocarbons.
(e) Nitrogenous compounds viz, methylamine.
(f) Saponin.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ 

১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৭১-৭৩।

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.