অপুষ্টি : কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধ

দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR), পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া (PHFI) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (NIN) নিউট্রিশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে ভারতের প্রতিটি রাজ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রাথমিক ঝুঁকির কারণ ছিল অপুষ্টি। মৃত্যুর হার মারাত্মকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০৬,০০০। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৯৫ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্ট, যার বেশিরভাগই আফ্রিকা ও এশিয়ায়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতে অপুষ্টিজনিত শিশুদের সংখ্যার হার বেশি। ভারতে, পাঁচ বছরের কম বয়সের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ হচ্ছে না এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২১ শতাংশ শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্টির শিকার। ভারতের যে রাজ্যগুলিতে অপুষ্টিজনিত সমস্যা বেশি সেগুলি হল, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং বিহার।

অপুষ্টি কী ?

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এর মতে অপুষ্টির অর্থ হল, একজন ব্যক্তির পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতা। একধরনের অপুষ্টি হল- যার মধ্যে কম ওজন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি রয়েছে। অন্যটি, অতিপুষ্টি। অপুষ্টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

অপুষ্টির লক্ষণগুলি হল, অস্বাভাবিকভাবে দেহের ওজনের পরিবর্তন, ক্লান্তি, কাজকর্মে অক্ষমতা ইত্যাদি। অপুষ্টির কারণ হল, ভুল খাদ্যাভাস, আর্থ-সামাজিক কারণ ইত্যাদি। সছিক সময়ে এর চিকিৎসা না করালে বাচ্চা, বড়ো সবার ক্ষেত্রেই জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এককথায়, কারোর শরীরে পুষ্টির অভাবই হল অপুষ্টির মূল কারণ।

যেখানে পুষ্টিকর উপাদানগুলো যথেষ্ট নয় অথবা এত বেশি যে তার কারণে স্বাস্থ্যের সমস্যা ঘটে। সংশ্লিষ্ট পুষ্টিকর উপাদানগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ। যদি গর্ভাবস্থায় অথবা দুই বছর বয়স হওয়ার আগে পুষ্টির অভাব ঘটে, তাহলে এর ফলস্বরূপ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমস্যা হতে পারে। পুষ্টির চরম অভাবের যে উপসর্গগুলো থাকতে পারে তা হল: খাটো উচ্চতা, রোগা শরীর, খুব দুর্বল প্রাণশক্তির মাত্রা এবং পা ও পেটে ফোলাভাব, প্রায়ই সংক্রমণের শিকার এবং ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা।

অপুষ্টির কারণ :
ক) ক্ষুধার অভাবের কারণে হয়
খ) হজম সংক্রান্ত সমস্যা
গ) মানসিক পরিস্থিতি ভালো না হলে, যা আপনার মেজাজ এবং খাওয়ার ইচ্ছার ওপর প্রভাব ফেলে।
ঘ) ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো রোগ খাদ্য হজম করার ক্ষেত্রে বা পুষ্টি গ্রহণে শারীরিক ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
ঙ) অপুষ্টির কারণে অ্যানোরেক্সিয়া হতে পারে, একটি খাওয়ার ব্যাধি।
চ) মদ্যপান
ছ) স্তন্যপান

অপুষ্টির উপসর্গ :
১. খাদ্য গ্রহণ ও পান করার ক্ষেত্রে অনিচ্ছা
২. অত্যাধিক ক্লান্তি
৩. মনঃসংযোগে অসুবিধা
৪. সারাক্ষণ ঠান্ডা লাগা
৫. ওজন কমে যাওয়া
৬. কোনও ক্ষত নিরাময়ে দীর্ঘ সময় লাগা
৭. অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগা
৮. পেশীর দুর্বলতা
৯. পেট ফোলা
১০. মাথা ঘোরা
১১. শক্তির অভাব
১২.বিষণ্ণতা
১৩. শুষ্ক ত্বক
১৪. দাঁতের ক্ষয় শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির অভাব দেখা যায় এবং তারা ক্লান্ত, খিটখিটে হয়ে যায়। আচরণগত এবং বৌদ্ধিক বিকাশও ধীর হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, কোনও কিছু শেখার ক্ষেত্রে অসুবিধা তৈরি হয়।

শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির প্রভাবগুলি কী কী?
১. দাঁতের ক্ষয়
২. দুর্বলতা
৩. মাড়ি থেকে রক্তপাত
৪. শুষ্ক ত্বক
৫. কম ওজন
৬. মনঃসংযোগে অসুবিধা
৭. ফোলা পেট
৮. পেশী দুর্বলতা
৯. শক্তি হ্রাস
১০. অস্টিওপরোসিস
১১. শেখার সমস্যা

শিশুদের অপুষ্টির কারণ :
অপুষ্টির প্রধান কারণগুলি হল জনসংখ্যা, দারিদ্র্যতা, পুষ্টি সম্পর্কে অবগত না হওয়া, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ না করার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের বদলে শিশুরা অনেকসময়ই বিভিন্ন পানীয়, জুস ও চিপস বা জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করতে পছন্দ করে। জাঙ্ক ফুডের কারণেও শিশুদের শরীরে ক্ষতি হয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম খেতে দেওয়াও অপুষ্টির কারণ। অপুষ্ট শিশুদের কীভাবে চিকিৎসা করা যায়? যদি আপনি দেখেন যে আপনার শিশু দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তার পুষ্টির অভাব আছে। এ ব্যাপারে ফেলে না রেখে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করান।

চিকিৎসক শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা এবং সে কী ধরনের খাবার খাচ্ছে তার প্রকার ও পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এছাড়াও, চিকিৎসক শিশুটির উচ্চতা, ওজনও পরিমাপ করতে পারেন। পুষ্টির ঘাটতিগুলি পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক রক্ত ​​পরীক্ষার আদেশ দিতে পারেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপুষ্টির প্রভাবগুলি কী কী?
প্রাপ্তবয়স্কদের অপুষ্টিজনিত কারণে ওজন হ্রাস, শক্তি হ্রাস এবং পেশীর দুর্বলতা, ক্লান্তি, হতাশা, রক্তাল্পতা, স্মৃতিশক্তির সমস্যা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, মনঃসংযোগে অসুবিধা, খেতে ইচ্ছা না হওয়া, কোনও ক্ষত নিরাময়ে দীর্ঘ সময় লাগা ইত্যাদি হতে পারে । Sponsored President Donald Trump’s Childhood Home Up For… Mansion Global

প্রাপ্তবয়স্কদের অপুষ্টির কারণ :
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা ক্ষুধায় ব্যাঘাত ঘটায়। অ্যালকোহল ক্ষুধা হ্রাস করে এবং শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এটি খাদ্য সংরক্ষণ, হজম আরও নানান শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ব্যহত করে। পুষ্টির প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করে।

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কীভাবে অপুষ্টির চিকিৎসা করা যায়? অপুষ্টির চিকিৎসা তার কারণ ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। একজন অপুষ্টির রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যেতে পারে, আবার হাসপাতালে রেখেও চিকিৎসা করা যায়। বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য, যেমন, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হতে পারে। যদি কোনও বিশেষ একটি পরিপোষক পদার্থের ঘাটতি থাকে, তাহলে তার একটি সম্পূরক বস্তুও সুপারিশ করা হতে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার জন্য কিছু পরীক্ষা করার কথাও চিকিৎসক বলতে পারেন।

অপুষ্টি প্রতিরোধের উপায় :
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষণ পর পরই খাদ্য গ্রহণ করুন।
২. নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার।
৩. শাকসবজি, ফল বেশি করে খান, সময়মতো জল পান করুন।
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরী
৫. ওজন বাড়াতে চাইলে ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি বেশি করে খান।
৬. বাইরের খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুনষ
৭. খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকতে হবে।

 

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.