পারকিনসন ডিজিজ : কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

পারকিনসন , মস্তিষ্কের এক বিশেষ রোগ। মারণ ব্যাধিগুলির মধ্যে বর্তমান দিনে এটি একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগটি মূলত নিউরো ডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুর অধঃপতনজনিত রোগ। অ্যালজেইমার রোগের পরে এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। মারা গেছেন কয়েক হাজার মানুষ। চলুন তবে জেনে নিই এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

পারকিনসন রোগ কী?

পারকিনসন রোগ এক প্রকার নিউরো ডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুর অধঃপতনজনিত রোগ। নিউরো ডিজেনারেটিভ মানে নিউরনের অধঃপতন বা মৃত্যু। নিউরন হল মস্তিস্কের এক ধরনের কোষ এবং মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি। যখন মস্তিস্কের সাবস্টেন্সিয়া নাইগ্রায় নিউরনের মৃত্যু ঘটে তখন এই রোগের জন্ম হয়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এই রোগ। অল্প বা মধ্যবয়স্কদের তুলনায় ৬০ বছরের উর্ধ্ববয়সী মানুষের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা দেয়। নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এই রোগে অধিকতর প্রভাবিত হয়। রোগের লক্ষণ মানুষ কেন এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু এখনও অজানা। তবে গবেষকদের ধারণা জেনেটিক বা পরিবেশগত উপাদানের জন্য এই রোগের সৃষ্টি হয়। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোন সঠিক প্রক্রিয়া নেই।

ঔষধ এবং অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে লক্ষণগুলি পরিচালনা করা সম্ভব।

১) হাত,পা,মাথা এবং মুখের থুতনি ও চোয়াল কেঁপে ওঠা।
২) ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া।
৩) হাত পা ও শরীরের মাংস পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া। ফলে, শরীরের যেকোনও অংশ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়, যেমন- হাত ঘোরাতে বেশ কষ্ট অনুভূত হয়।
৪) হাঁটাচলা ক্রমশ ধীরগতি হয় এবং জড়তা দেখা দেয়।
৫) গলার স্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন- গলার সর ক্রমশ ভারি ও ক্ষীণ হয়ে যায়। ৬) নিজের মধ্যে অসম্ভব উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও অবসাদ জন্ম নেয়।
৭) স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
৮) কোষ্ঠকাঠিন্য বা চামড়ার নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
৯) ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে।
১০) কখনও ঘুম বেশি হওয়া বা একেবারে ঘুম না হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
১১) যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। ১২) খাবার গিলতে সমস্যা ও অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগ।

রোগ নির্ণয় লক্ষণগুলি এবং কিছু মেডিক্যাল টেস্টের উপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

শারীরিক পরীক্ষা
যেমন- MRI, CT scan, PET (Positron emission tomography) এবং SPECT (Single-photon emission computed tomography) দ্বারা রোগ নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোন সঠিক প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, ডাবলিনের United neuroscience নামের একটি সংস্থা এই রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২৪ জন রোগীর উপর এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয় এবং তা সফল হয়। এই ভ্যাক্সিন ছাড়াও UB-312 নামের আরেকটি ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে ভ্যাক্সিন ছাড়া পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁটাচলার সমস্যাকে দূর করতে স্টেম সেল রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমেও চিকিৎসার কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ এই রোগে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণকারী কোষের মৃত্যু হয় এবং অঙ্গ সঞ্চালনে অক্ষমতা দেখা দেয়। এছাড়াও, যে পদ্ধতি গুলে রয়েছে, যেমন- ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ঔষধের সাহায্যে কিছুটা সুস্থ থাকা যায় এবং রোগটির বাড়াবাড়ি পর্যায় দেখা দিলে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে সাময়িক ভাল থাকা যায়। এমনকি ফিজিওথেরাপির সাহায্যেও এই রোগ কিছুটা ভাল করা যায়।

রোগ প্রতিরোধ
১) নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে দিন শুরু করুন।
২) সাঁতার ও সাইক্লিং করতে হবে।
৩) হাত,পা, ঘাড় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।
৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ভিটামিন যুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
৫) একই জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৬) ভিটামিন ডি ও সি যুক্ত খাবার বা ঔষধ সেবন করুন। কারণ, এটি পারকিনসন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৭) নিয়মিত আকুপ্রেসার করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

Naturopathy

পাকির্নশন রোগ প্রতিরোধে Naturopathy অনেক বেশি কার্যকর, যেমন বয়স ৬০ এর কোটা পার হলেই মানুষের স্মৃতিশক্তিতে একটি চলমান ক্রিয়ায় একটু শিথিলতা আসতে থাকে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে যা আমরা স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু বাস্তবিক দিক বিবেচনা করলে এমন হওয়ার কথা নয়, আমাদের খাদ্যভাস, জীবনাচরণ আমাদের বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। আমরা যদি সচেতন হতে পারি তাহলে এই রোগ আমাদের কাছে আসবে না, পরিবারের কাছে এমন অভিশাপ আসবে না।

এই থেকে মুক্তি দিতে পারে Naturopathy , আমরা সময় কে জ্ঞান করলে, ৫০ পার হলেই খাদ্যের একটি পরিবর্তন এসে সহজ পাচ্য ও কাঁচা খাবার, সালাদ ও ফলের প্রতি ঝোঁক দিলে শরীর সহজেই নিজেকে বহন করতে সক্ষম হবে। সেই সাথে নিয়মিত আকুপ্রেসার করলে শরীরের কোন ক্রোণিক সমস্যা হবে না, থাকলেও কমে যাবে। সেই জন্য প্রয়োজন পরবে সঠিক নিয়মে আকুপ্রেসার জানা, প্রথমে অভিজ্ঞ জনের কাছে আকুপ্রেসার থেরাপী নেয়া পরবতির্তে নিজেই নিজের আকুপ্রেসার করে যাওয়া ।

এতে জীবন অর্থ দুই সংরক্ষিত থাকবে

আলমগীর আলম।

Recent Posts

পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে একটা এলাচিই হতে পারে মুশকিল আসান – আলমগীর আলম

এলাচি ছোট্ট একটি মসলা। অথচ সেটিতেই হতে পারে মুশকিল আসান। পেটে গ্যাস জমলে এই এলাচিতে মিলতে পারে সমাধান। খাওয়ার পরে… Read More

October 5, 2024

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম

আপনি কি জানেন, পুদিনা মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে? সতেজ পুদিনাপাতার রস বা চা স্বাদের জন্য দুর্দান্ত।… Read More

October 5, 2024

এসি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এড়ানো যাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি – আলমগীর আলম

নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।… Read More

August 13, 2024

This website uses cookies.